নোবিপ্রবিতে ১০ দিনের জন্য হল বন্ধ, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
সনাতন ধর্মের সবথেকে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা ও ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) হলগুলো ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ছোট বড় সব ছুটিতেই হল বন্ধ করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপে ফেলা হয় বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন হলের নিয়মিত আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
নোবিপ্রবি ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত এক নোটিশ অনুযায়ী, ২ অক্টোবর (রবিবার) হতে ৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত শ্রী শ্রী দূর্গাপূজা ও বিজয় দশমী এবং ৯ অক্টোবর (রবিবার) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী-মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এতে আরো বলা হয়, উক্ত ছুটিতে কোন শিক্ষার্থী আবাসিক হল সমূহে অবস্থান করতে পারবে না এবং সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টবৃন্দ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হল প্রভোস্ট ড. মেহেদী হাসান রুবেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২ অক্টোবর (রবিবার) থেকে ৯ অক্টোবর (রবিবার) পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১১ ঘটিকার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য তিন ছাত্রী হল বঙ্গবন্ধু হল, বঙ্গমাতা হল ও বিবি খাদিজা হল এবং আরেক ছাত্র হল ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল বন্ধ করে দেয়া হয় এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর ছোট বড় সব ছুটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে নোবিপ্রবির আবাসিক হল সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে টিউশনি করে পড়াশোনা চালানো শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়, টিউশনি বন্ধ দিয়ে চলে যেতে হয় গ্রামে। এক্ষেত্রে অনেকসময় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়।
আবার মাঝেমধ্যে টিউশনি হারাতে হয় অনেকের। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা স্বল্প ছুটিতেও বাড়ি যেতে বাধ্য হয়, এক্ষেত্রে অনেকসময় গ্রামে আসা-যাওয়ার পথেই ছুটির অনেকটা সময় কেটে যায় তাদের। আবার করোনা পরবর্তীকালীন পড়াশুনার চাপ সামলে উঠতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী ছুটি বিমুখ। তাদের মতে, স্বল্প ছুটিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারলে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে নিজেদেরকে প্রতিযোগিতার বাজারে আরেকটু এগিয়ে রাখা যেত এবং করোনার প্রভাবে গতিশীল সেমিস্টারে যেন পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটে হলে থেকে সেটিও ঠিক রাখা যেত। ক্যাম্পাস বন্ধের সাথে হল বন্ধ রাখায় এসব শিক্ষার্থীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে সেমিস্টার পরীক্ষা ও চাকরির পড়াশোনা দু'দিকেরই চাপ রয়েছে। এই ছুটিতে হল বন্ধ করে দেয়ায় এখন পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
বঙ্গমাতা হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, "হঠাৎ করে হল বন্ধ ঘোষণা করায় বাধ্য হয়ে আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বহুদূরে আমার গ্রামের বাড়ি চলে আসতে হয়েছে। অথচ আমাদের সামনের সেমিস্টারের পড়াশোনার চাপ রয়েছে এবং মাইজদী শহরে টিউশনি ছিলো তাকে এই সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে আসতে হয়েছে। টিউশনিতে দীর্ঘছুটি দেয়াতে অভিভাবকদের সাথে মনোমালিন্য হয়ে যায়।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটিতেও আবাসিক হল খোল রাখা হয়, এতে নোবিপ্রবিতে হল বন্ধ রেখে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ক্ষতির সম্মুখীন করে অভিযোগ এনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক আবাসিক শিক্ষার্থী দাবী তোলেন, ভবিষ্যতে যেনো এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয় এবং সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।
এই পূজাতেও খোলা রয়েছে দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শাবিপ্রবি, বেরোবি, হাবিপ্রবি, ববি জাককাইনইবির হল সমূহ খোলা রয়েছে। এছাড়া ঈদের ছুটি সহ বড় ছুটি সমূহেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা রাখে।
নোবিপ্রবির ৫ হল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান হল প্রভোস্টেরা। যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং হল প্রশাসন সেটি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছুটির নির্দেশনাকে অনুসরণ করে হল বন্ধের নোটিশ দিয়েছি৷
তবে ভবিষ্যতে এসব ছুটিতে হল খোলা রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তারা। এই ছুটিতেও সালাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরের যারা হলে থাকতে চেয়েছে তাদের থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হল প্রশাসন।