রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দেয়ার প্রশ্নে বিভক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষক থেকে হওয়া রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের অপসারণ ও কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার করার দাবিতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়ে ৩য় দিনের মতো আন্দোলন করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ। তবে তালা দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন আরেকটি পক্ষ। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। নিয়মিত কার্যক্রম নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শির্ক্ষাীসহ সংশ্লিষ্টদের।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একপক্ষের দাবি, তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ না করার অভিযোগে রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের অপসারণ দাবি করে আসছেন। এসময় তারা কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার করার দাবি তোলেন।
আরও পড়ুন: লাল কার্ড দেখিয়ে ইবিতে মাস্ক বিতরণ
কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার আসার পর থেকে গত ৪ বছরে আমরা আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। তাই আমরা কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার দেওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
এদিকে রেজিস্ট্রারের দফতরে তালা দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আরেকটি পক্ষ। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের গোল চত্বরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে সকালে তালা দেওয়ার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়েছে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।
৮২ জন কর্মচারীর স্বাক্ষর সম্বলিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, রেজিস্ট্রার দফতরে তালা ও বর্তমান প্রশাসনকে অদক্ষ প্রশাসন বলে অবহিত ও অশালীন মন্তব্যের বিষয়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর সাধারণ কর্মচারীরা অবগত নয়। কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের বিষয়ে আমরা সাধারণ কর্মচারীরা সবসময় একমত ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।
তারা আরও বলেন, সমিতি যদি সাধারণ কর্মচারীদের মতামত না নিয়ে অযৌক্তিক দাবিতে কোনো পদক্ষেপ নেয় যা কর্মচারী চাকুরী বিধির নিয়ম পরিপন্থি এবং যার জন্য পরবর্তীতে সাধারণ কর্মচারীদের ক্ষতি হয় এবং বহির্বিশ্বে ও সারা বাংলাদেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন বিষয়ে আমরা সাধারণ কর্মচারীরা কখনও একমত ছিলাম না।
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বলেন বলেন, কর্মকর্তা সমিতি থেকে তালা দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যকোনো সংগঠন থেকে তালা ঝুলানো হতে পারে।
তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীদের সংগঠনের সাবেক সহ সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, গুটিকয়েক ব্যক্তি রেজিস্ট্রার দফতরে তালা দিয়ে রেজিস্ট্রারের অপসারণ চেয়েছে। তারা রেজিস্ট্রারকে অদক্ষ বলেছেন। আমরা অপসারণ চাই না। তবে আট দফা দাবি প‚রণের জন্য আমরা আন্দোলন করবো।
আরও পড়ুন: ‘তুই’ সম্বোধনের প্রতিবাদ, এক নেত্রীকে পেটালেন আরেক নেত্রী
এ বিষয়ে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, আমরা বর্তমান রেজিস্ট্রারের অপসারণ চাই, পাশাপাশি কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার চাই। কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রার হলে আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হবে।
এদিকে রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলানোয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। চলমান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়াও আটকে আছে রেজিস্ট্রার দপ্তরের অচলাবস্থার কারণে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ বলেন, সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছি। সেখান থেকে ভ্যারিফিকেশনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর একটি মেইল পাঠানো হয়। কিন্তু কন্ট্রোলার অফিসে মেইল না আসায় রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। অফিসে তালা থাকায় রেজিস্ট্রার স্যার অপরাগতা প্রকাশ করেন। যা আমাদের জন্য ভোগান্তিকর।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের শেষ সময়কে কেন্দ্র করে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতির চর্চার মতো। আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয় এই অপরাজনীতি থেকে মুক্ত হোক। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দাবি করতেই পারে। তবে শিক্ষকদের মধ্য হতে রেজিস্ট্রার হলে তা শিক্ষক-শির্ক্ষাী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ভাল।
প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি দাওয়া পূরণ ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এখানে অফিস তালাবদ্ধ করে ভিসির শেষ সময়ে পরিবেশ অস্থিতিশীল করে নতুন ভিসির কাছ থেকে সুবিধা নিতে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতি শুরু করে। এতে শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।