‘নিষ্ঠুর একটা কথা বললাম’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময় হচ্ছে শৈশব এবং কৈশোর। কিন্তু খুবই দুঃখের ব্যাপার বাংলাদেশের দেশের বর্তমানে যেসব ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে তাদের জীবনে কিন্তু কোন আনন্দ নেই। নিষ্ঠুর একটা কথা বললাম আমি।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) আয়োজিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও বলেন, তার একমাত্র কারণ হচ্ছে লেখাপড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। ঠিক কি কারণ জানি না। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কোচিং বলে কোন জিনিস ছিলনা। প্রাইভেট পড়াটা একান্তই ছিল। যদি প্রাইভেট পড়তো সেটা কেউ জানতো তখন সে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতো না।
“কিন্তু এখন আমদের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি কোচিং করতে হয়, তাদের প্রাইভেট পড়তে হয়। তদের মা-বাবাদের ধারণা যে পরীক্ষা ভালো ফল করাটাই লেখাপড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলে তাদেরকে এতো অপমান করা হয় যে অনেক বাচ্চা অল্প বয়সে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়। এ ধরণের ঘটনা ঘটনার কোন শেষ নেই। এটা আমাদের সবার একটি চরম ব্যর্থতা। এটা কিভাবে হলো? ছেলেমেয়েদের শৈশবে এবং কৈশোরে কোন আনন্দ নেই। আসলে মোটেও এরকম হওয়ার কথা না।”
তিনি আরও বলেন, আমি সব সময় বাচ্চাদের বলি তোমরা মুখস্ত করো না। তোমরা কোচিং করো না বললে তো লাভ হবে না। কারণ মা-বাবারা তাদের কোচিংয়ে পাঠাবে। কিংবা তাদের স্কুলের শিক্ষকরা এমন এক অবস্থা তৈরি করে রাখবে কোচিং না করলে পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাবে না। সিস্টেমটা এরকম হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটা ছেলেমেয়ে কিন্তু পাঠ্যপুস্তক মুখস্ত করে লেখাপড়া করে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকানিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গণিত বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হাকিম খান প্রমুখ।