৮০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রেখেই খুলছে স্কুল-কলেজ

ছিবিতে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো
ছিবিতে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ফটো

গত দেড় বছরে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। শিক্ষকদের অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে এই শূন্য পদ তৈরি হয়েছে। করোনার ভয়াবহতা, মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে নিয়োগ বন্ধ থাকাও এক্ষেত্রে বড় কারণ। বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের এই পদ শূন্য রেখেই আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলতে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সংকটের সমাধান না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় পাঠদানের মান কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এছাড়া ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের কাজ চলমান থাকায় অচিরেই শিক্ষক সংকট দূর হবে বলে অভিমত তাদের। তাদের দাবি, স্কুল-কলেজ খোলা হলেও এখনই সব শ্রেণির প্রতিদিন পাঠদান হবে না। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত শিক্ষক রয়েছেন; তাদের দিয়ে পাঠদানে কোনো সমস্যা হবে না।

তথ্যমতে, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) উপর ন্যাস্ত। ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রণয়ন করে আসছে এনটিআরসিএ। এখন পর্যন্ত ১৫টি নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ প্রার্থীকে সনদ দিয়েছে এনটিআরসিএ। সনদ দিলেও ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত চাকরি হতো কমিটির মাধ্যমে। তবে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় এনটিআরসিকে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। আর তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরও ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করে এনটিআরসিএ। সে আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষক চাহিদা পাঠানো হয় এনটিআরসিএতে। সেখান থেকে নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হয় প্রতিষ্ঠানে। সে তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। সবশেষ পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি স্কুল-কলেজে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের যে শূন্য পদ রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। স্কুল-কলেজে শিক্ষক সংকট থাকলে একটি বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে একাধিক ক্লাস নেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের যেমন শিখন ঘাটতি থেকে যাবে, তেমনি শিক্ষকরাও ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন না। তাই করোনা পরবর্তী শিক্ষা ঘাটতি মেটাতে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট দূর করার দাবি তাদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষকের যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটি সাময়িক। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সবকিছু থমকে ছিল। এই অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ ছিল না। এছাড়া বিভিন্ন মামলার কারণেও দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ছিল। তবে এখন সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করায় স্থগিত থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রতিবছর আমাদের অল্প সংখ্যক শিক্ষক অবসরে যান। শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার কারণে এত বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য হয়নি। মামলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় শূন্য পদ তৈরি হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা সচিব বলেন, এনটিআরসিএর বিষয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন গুরুত্বের সাথে দেখছে। আমরা করোনার মধ্যেও আইনজীবীদের সঙ্গে বসে মামলার জট দূর করেছি। ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা ছিল। তবে প্রার্থী না থাকা এবং আবেদন না করায় ১৫ হাজার পদ ফাঁকাই রাখতে হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হলেই ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। তখন শিক্ষক সংকট দূর হয়ে যাবে।

এদিকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলছেন, দীর্ঘ দুই বছর পর গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হলেও এখনো পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি না থাকলেও ভেরিফিকেশনের ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেরিফিকেশন শেষ করে নিয়োগ সম্পন্ন করলে শিক্ষকের যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটি কিছুটা হলেও দূর হবে বলে অভিমত তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, সরকার যোগদানের আগে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছি। তবে গত জুলাইয়ে ফল প্রকাশ করা হলেও এখনো ভেরিফিকেশন শেষ করতে না পারা এনটিআরসিএর অদূরদর্শিতা বলেই মনে করি।

তবে এনটিআরসিএ বলছে, তারা এক দফায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের তালিকা পাঠিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভেরিফিকেশনের জন্য তাদের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে পাঠাতে বলায় কিছুটা সময় লাগছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের ভি রোল ফরম পূরণ করে ডাকযোগে এনটিআরসিএতে পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপর সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এরপর ভেরিফিকেশন শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা যেন দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করে সেজন্য আমরা তাদেরকে অনুরোধ করবো। মুজিব বর্ষে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকবে না। এনটিআরসিএকে আমরা সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ