সেপ্টেম্বরেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
চলমান করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইন, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে সরকার। তবে ভার্চুয়াল এসব কার্যক্রম খুব একটা উপকারে আসছে না। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি ওঠে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে। এরই মধ্যে আগামী ২০ আগস্ট থেকে মেডিকেল কলেজগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি আগস্ট মাসের মধ্যে পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ করা হবে। এছাড়া প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদেরও টিকাদান দ্রুত শেষ করা হবে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ক্লাস কার্যক্রম সশরীরে শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়। এরপর কলেজ এবং সবশেষ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেজন্য পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। টিকাদান শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের ছাত্রছাত্রীদের যে সংখ্যা আছে তাতে শিগগিরই তারা টিকার আওতায় চলে আসবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে টিকার কাজও চলমান থাকবে। এরমধ্যে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে সেপ্টেম্বরে সশরীরে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবো বলে আশা করছি।
এদিকে, আগামী ২০ আগস্ট থেকে দেশের সব মেডিকেল কলেজ খুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রাখা হলেও ব্যবহারিক ও পরীক্ষার জন্য সশরীরে মেডিকেল কলেজগুলো খোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে মেডিকেল কলেজ বন্ধ। এভাবে শুধু বন্ধ রাখা কোনো সমাধান হতে পারে না। পরিস্থিতি কবে নাগাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া মেডিকেলের সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ২০ আগস্ট থেকে মেডিকেল কলেজ খোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগামী ২০ আগস্ট থেকে মেডিকেল কলেজ খোলার প্রস্তাব স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এদিন থেকেই সশরীরে পাঠদান শুরু করা হবে।
এদিকে ক্যাম্পাস খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছে পাবলিক-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোও। হল মেরামতসহ ইতোমধ্যে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শেষ করা হয়েছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সশরীরে কার্যক্রম শুরু করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নির্ভর করছে সরকারের উপর। আমরা সরকারি নির্দেশনা পেলে সশরীরে পাঠদান শুরু করবো। আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস খোলার সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-ক্যাম্পাস খোলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইউজিসির কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে টিকা না দেয়া গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সংক্রমণ কমার অপেক্ষা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগস্ট মাসের মধ্যে যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা কার্যক্রম শেষ হয়ে যায় তাহলে আগস্টে হল-ক্যাম্পাস খোলা যাবে। তবে এই সময়ের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকা দেয়া হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এখনো টিকার নিবন্ধন করতে পারেনি। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার অনুরোধ করলেও এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।