সুখবর পাচ্ছেন ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী, সুবিধা মিলবে অবসরেও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন জাতীয়করণ হওয়া ৩০৩ কলেজের জনবল আত্তীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে করে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণের সুবিধা পাবেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে ২০টি টিম গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো সরকারি করণ করা হয়েছে দেশের প্রতিটি উপজেলার একটি করে স্কুল ও কলেজ। তবে কলেজ সরকারি করার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আত্তীকৃত হননি ৩০৩ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী। যাদের মধ্যে মারা গেছেন দেড় হাজার শিক্ষক কর্মচারী আর অবসরে গেছেন অনেকেই।
নতুন এই উদ্যোগের ফলে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের পাশাপাশি সুবিধাদি পাবেন অবসরে যাওয়া ব্যক্তিরাও। আত্তীকৃত কাজটি দ্রুত শেষ করতে ২০টি টিম করে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ করতে দ্রুত কাগজপত্র যাচাইবাছাই করা হবে। সেজন্য ২০টি টিম কাজ করবে। এসব টিমের কাজ তদারকি করতে অতিরিক্ত সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছুটির দিনেও কাজ করতে টিমের সঙ্গে জড়িতদের জন্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব টিম আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারি হওয়া ৩০৩টি কলেজের মধ্যে ১৮২টি কলেজের পদ সৃজনের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাইবাছাই শেষ করবে। অবশিষ্ট কলেজগুলোর যাচাই কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
গঠিত ২০ টিমের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কলেজগুলোর কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষ করা, টিম প্রধানদের স্ব-স্ব শাখায় কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক বাছাই কার্যক্রম শেষে চূড়ান্ত কার্যবিবরণী প্রস্তুত করা, পদ সৃজনের কাজ দ্রুত শেষ করতে এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করার জন্য প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগকে অনুরোধ করা, তদারককারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতি সপ্তাহ শেষে তার অধীন টিমের কাজের অগ্রগতি অবহিত করা এবং অত্যাবশ্যক না হলে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার ছুটি ভোগ না করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারিকৃত ৩০৩টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র যাচাইবাছাইয়ের জন্য পাঁচটি টিম কাজ করছিল। এই কমিটি এরই মধ্যে ১২১টি কলেজের বাছাই কার্যক্রম শেষ করেছে। এর মধ্যে একটি কলেজের ২১টি পদ সৃজনে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে পদ সৃজনের আদেশ জারি প্রক্রিয়াধীন। ৩৭টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া পদ সৃজনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সভায় ৩৪টি কলেজের জন্য পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়েছে। যা সচিব কর্তৃক অনুমোদিত। ৩৪টি কলেজের কাগজপত্র সত্যায়িত/প্রতিস্বাক্ষরিত হওয়ার পর পদ সৃজনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এছাড়া পাঁচটি কলেজের কার্যবিবরণী কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৬টি কলেজের কার্যবিবরণী খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং ২৮টি কলেজের খসড়া কার্যবিবরণী প্রস্তুতের কার্যক্রম বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী বয়স ৫৯ বছর হওয়ায় ১৩৭২ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। প্রায় তিন বছর আগে কলেজগুলো সরকারি করা হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকৃত না করায় তারা সরকারিকরণের সুফল ছাড়াই অবসরে গেছেন। তবে তাদের বিষয়ে সরকার জিও জারির দিন থেকে সরকারি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, এর আগে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু দৃশ্যমান কিছু হয়নি। তাই সবকিছুর দৃশ্যমান কিছু না হওয়া পর্যন্ত তারা এসব উদ্যোগে বিশ্বাস করেন না বলে জানান তিনি।