বাড়ছে ছুটি, এ বছর খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

চলমান মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। করোনা পরিস্থিতির শুরু হওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে চলতি মাস প্রায় শেষের দিকে হলেও এখন পর্যন্ত নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনও ইতিবাচক নির্দেশনা নেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র।

তবে আসন্ন শীতে করোনার প্রকোপ ফের বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিৎ হবে না। শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরাও ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত বিদ্যালয় না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি (ন্যাপ) আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ এই পরিস্থিতিতে হয়তো নভেম্বরেও খোলা যাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই সে কারণে নভেম্বর থেকে পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী নভেম্বরে খুলে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৫ দিন আগেই প্রস্তুতি নিতে হতো। সে হিসেবে গত ১৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনও ধরনের নির্দেশনা নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে প্রস্তুতি লাগবে ১৫ দিন। কিন্তু সেই সময় খোলা গেলেও শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা যাবে না। ফলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব মূল্যায়নে অটোপাস দিতে হবে।

এদিকে আসন্ন শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হওয়ার শঙ্কায় নভেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে ছুটি। এরই মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে সেকেন্ড ওয়েভের জন্য জেলায় জেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ আবস্থায় এ বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার সম্ভবনা বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যেহেতু আমরা নভেম্বরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ এর প্রস্তুতি নিচ্ছি কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেহেতু মনে হয় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সম্ভবনা আছে।’

তিনি জানান, ‘সংক্ষিপ্ত এই পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না গেলে শ্রেণি মূল্যায়নেরও সুযোগ থাকবে না। ফলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অটো পাস দিতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য শ্রেণিতেও দেওয়া হবে অটো প্রমোশন।’

তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় নভেম্বর থেকে লেসন প্ল্যান অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা নেই। পরিস্থিতি উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি নভেম্বরে স্কুল খোলা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী যেটি বলেছেন, আমাদের অটো পাস ছাড়া উপায় নেই।’

এছাড়াও সম্প্রতি তিনি বলেছেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। করোনার প্রকোপ বাড়লে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না যায় তবে তো অটো প্রমোশন ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে ছুটি বাড়ানো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’ নভেম্বরে খোলার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশনা দিতে পারেনি। করোনা আক্রান্তের হার কমলেও সিঙ্গেল ডিজিটে এখনও যায়নি। আক্রান্তের সংখ্যা সিঙ্গেল ডিজিটে গেলে তখন বোঝা যাবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে।

এর আগে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে গত ১৭ মার্চ একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর পর কয়েক দফায় ছুটি বাড়লেও সবশেষ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ শীতে বৃদ্ধির আশঙ্কায় এই ছুটি আরো বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।