০৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০০

জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সমন্বিত পরীক্ষার আশা

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো  © ফাইল ফটো

দেশে চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবারের এইচএসসি ও সমমোনের পরীক্ষা বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার্থীর বিগত জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই এইচএসসির গ্রেড দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়। এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়েও আলোচনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বুধবার (৭ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ভার্চুয়াল বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেসহ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ টিমের সাথে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এইচএসসি পরীক্ষার সাথে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী, তাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ জড়িত থাকবেন। তাদের আমরা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। এ অবস্থায় আমরা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করছি। পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-এসএসসি ফল বিশ্লেষন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসির গ্রেড দেয়া হবে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই।

করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তির আশা ব্যক্ত করে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করছি এবার সমন্বিত পদ্ধতিতে সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিতে পারবো। পরীক্ষাগুলো গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে কীভাবে হবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এবং তখনকার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। কখন পরীক্ষা নেয়া যাবে বলা কঠিন। এরমধ্যে যথার্থতা বজায় রাখার বিষয়টি ভাবতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণ করতে ৩০ থেকে ৩২ কর্মদিবস প্রয়োজন হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে এক বেঞ্চে দুজন বসানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দ্বিগুন কেন্দ্র প্রয়োজন হবে। প্রশ্নপত্র প্যাকেটজাত করা হয়। নতুন প্যাকেট করারও সুযোগ নেই।

মন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র দ্বিগুন করলে আরও জনবল প্রয়োজন হবে। প্রশাসনসহ সবার জনবল বাড়ানো প্রয়োজন রয়েছে। বিষয় কমানো হয়তো যায়, কিন্তু প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্ব রয়েছে। অনেকে এতে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করতে পারবে। কোভিড আক্রান্ত হলে তখন কী হবে। এ নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। ভারতের পরীক্ষাও আমরা দেখেছি। তিনটি পরীক্ষা নেয়ার পর তাদের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অনেক দেশে পরীক্ষা বাতিল কিংবা স্থগিত করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনাদের সময় জানিয়ে দেব। যখন সময় হবে, তখন বিস্তারিত জানানো হবে। আজ (মঙ্গলবার) জানাতে পারব না। কাল হয়তো আপনাদের সঙ্গে কথা বলব।’

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থগিত হয়ে গেছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। এরমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর করা হয়েছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকার ছাড়াও উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার তোড়জোড় শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ১ এপ্রিল চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এবার ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য প্রায় দুই হাজার ৫০০ কেন্দ্রে প্রস্তুত করেছিল ১১টি শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনার কারণে এখন প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ হাজার কেন্দ্র প্রয়োজন হবে।

প্রসঙ্গত, এবার এইচএসসি-সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের কথা ছিল। এর মধ্যে নিয়মিত ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৮১ এবং অনিয়মিত ২ লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ জন। এদের মধ্যেএক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন। আর দুই বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ২২৪ জন। এক বিষয়েও পাশ করতে পারেননি এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪১ জন। প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৩৯০ এবং খারাপ ফলের কারণে ১৬ হাজার ৭২৭ জন পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল।