শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়বে কিনা— দোটানায় মন্ত্রণালয়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়বে কিনা— তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তারা যখন মনে করবে, তখনই খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া কিংবা না দেয়ার এখতিয়ার শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। আবার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের মতামতও ব্যাপার আছে। সবমিলিয়েই দুই মন্ত্রণালয় দোটানায় আছেন। তবে দু’দিন পর তথা ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।

তথ্যমতে, করোনা মহামারীর মধ্যে এখন পর্যন্ত যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, এর অন্যতম হলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। মহামারীর কারণে ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। আটকে আছে এইচএসসি পরীক্ষাও। সার্বিক বিবেচনায় এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই মনে করছেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের অনেকে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বোর্ডগুলো এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে না দেয়ার পক্ষে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়ার কথা ভাবছে বোর্ডগুলো। অবশ্য সেটি নির্ভর করছে কবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তার ওপর।

এমতাবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া স্থগিত হয়ে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও কথা বলবেন শিক্ষামন্ত্রী।

না খোলার পক্ষে শিক্ষাবিদের: এদিকে বর্তমান পরিস্থতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলতে পারবেন। তবে আমরা যেটা মনে করি যে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যতদিন উচ্চমাত্রায় থাকবে ততদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। কারণ, শিক্ষার্থীরা হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্পদ। তাদেরকে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন:- জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি, এগুলো খোলার আগে আরেকটু সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সেক্ষেত্রে শুধু নিজেদের দেশের নয় বরং আশেপাশের দেশগুলো বিশেষ করে যেসব দেশে সংক্রমণের মাত্র অনেত বেশি তারা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটাও দেখার দরকার আছে। অর্থাৎ, করোনা পরিস্থিতি আমাদেরকে যে অবস্থায় নিয়ে এসছে সেটি নিয়ে আমাদেরকে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে বিশ্ব অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত করে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়াটা বাঞ্ছনীয়।

তিনি আরো বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সেটিকেও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ শীত আসন্ন। শীতের সময় সর্দি, কাশি এগুলো আরো বেড়ে যায়। যদি সেগুলো বেড়ে যায় আর করোনার সংক্রমণও থাকে তাহলে পরিস্থিতিতে যে জটিলতার দিকে যাবে সেটি সহজেই বোঝা যায়।


সর্বশেষ সংবাদ