অধ্যক্ষ নেই ১৪১ সরকারি কলেজে
দেশে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩২। এর মধ্যে ১৪১টিতে ফাঁকা রয়েছে অধ্যক্ষের পদ। সে হিসাবে, শতকরা ২২ শতাংশের কিছু বেশি কলেজে অধ্যক্ষ নেই। অধ্যক্ষের নেতৃত্বেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজগুলো হয়ে থাকে। নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় পড়তে হচ্ছে নানান সমস্যায়। শুধু অধ্যক্ষ নয়, ২৮টি কলেজে উপাধ্যক্ষের পদও শূন্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে পুরোনো কলেজের সংখ্যা ৩২৯টি। এর মধ্যে ৬৩টির অধ্যক্ষ পদ ফাঁকা। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া ৩০৩টি কলেজের মধ্যে অন্তত ৭৮টিতে অধ্যক্ষ নেই।
অনেক বড় কলেজেও অধ্যক্ষের পদটি খালি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বরিশালের সরকারি বি এম কলেজ, যশোরের সরকারি এম এম কলেজ, যশোর সরকারি সিটি কলেজ, ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, গৌরীপুর সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও ফরিদপুরের সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ অন্যতম।
অনেক কলেজ আছে, যেখানে একাধিক অধ্যাপক রয়েছেন। যাঁরা অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্য। এসবের মধ্যে একটি নীলফামারী সরকারি কলেজ। কলেজটিতে অধ্যাপক রয়েছেন পাঁচজন। কিন্তু সেখানে গত ৩০ এপ্রিল থেকে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা রয়েছে। কলেজটির একজন শিক্ষক বলেন, সেখানে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। অধ্যক্ষ না থাকায় দৈনন্দিন কাজগুলো কোনো রকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ বড় কলেজগুলোর মধ্যে একটি। গত সাত-আট মাস ধরে সেখানে উপাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা রয়েছে। উপাধ্যক্ষ না থাকা কলেজের মধ্যে আরও আছে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ, ভোলা সরকারি কলেজ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজসহ ২৮টি।
দেশের সরকারি কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার মতো শিক্ষকের কোনো অভাব নেই। সাধারণত অধ্যাপকদের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশের সরকারি কলেজে ৩৫০ জনেরও বেশি অধ্যাপক রয়েছেন। আর সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন ২ হাজারের মতো। তাঁদের মধ্য থেকেও ছোট কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া যায়।
সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫০ শিক্ষক মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না থাকায় কলেজগুলোর শীর্ষ এই দুই পদে নিয়োগ আটকে আছে। অবশ্য অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে না পারলেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষকদের নিয়মিত বদলি করা হচ্ছে। বদলির ক্ষেত্রে অনেক সময় তদবির ও নানা অনিয়মের ঘটনাও ঘটে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, কলেজগুলোতে প্রশাসনিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজগুলো অধ্যক্ষের নেতৃত্বে হয়ে থাকে। সেখানে নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকলে সমস্যা হবেই। আর আর্থিক কোনো বিষয় থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা দায়িত্ব নিতে চান না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, কোন কোন কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদ খালি, তা খুঁজে বের করে পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে দরখাস্ত নেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। অক্টোবরের মধ্যে পদগুলো পূরণের কাজ শেষ হবে।