শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়তে পারে
দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ফের বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। তবে সেপ্টেম্বরে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরই মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি রয়েছে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত ১৭ মার্চ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সব অফিস-আদালত আর যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে শুরু হয় লকডাউন। টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে প্রস্তুতি লাগবে ১৫ দিন। সেই হিসেবে অক্টোবরে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য নয়, শুধুই প্রস্তুতির জন্য। নভেম্বরে খোলা সম্ভব হলে চলবে শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বর মাসে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনো করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। গড় হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৩০-এর ওপর। আক্রান্তের হারও সন্তোষজনক নয়। আক্রান্তের হার দুই সংখ্যায় আর মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় এলে বোঝা যাবে মহামারী নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (ন্যাপ)। আগামী নভেম্বর থেকে বিদ্যালয় চালু করা গেলে এটি কার্যকর হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার আইন ও বিধি প্রণয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্টোবরে খোলার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশনা নেই। তবে আমরা অক্টোবর ও নভেম্বরকে দুটো টার্গেট করে দুটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নভেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে এখন করোনা পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্ভুত পরিবেশ অনুকূলে এলেই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করবে। পরীক্ষা নেয়ার মত অনুকুল পরিবেশ তৈরি হলে ১৫ দিন সময় দিয়ে স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তার ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে, যাতে পরীক্ষার্থীরাও জেনে প্রস্তুতি নিতে পারে। অনুকূল পরিবেশ হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করবে সরকার জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ছয় মাস বন্ধে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় তা থেকে উত্তরণের বেশ কিছু উপায় নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা প্রশাসন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরে সিলেবাস কমানো, শিক্ষা ক্যালেন্ডারের ছুটি কমানো, বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরে নেওয়া অথবা চলতি শিক্ষা বর্ষ আরও বৃদ্ধি করে আগামী বছরের প্রথম দুই-তিন মাস পর্যন্ত বাড়ানোর চিন্তাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।