ক্ষতি পোষাতে এবার নতুন পরিকল্পনা, সেপ্টেম্বরে শুরু হতে পারে ক্লাস
করোনা মহামারির কারণে কয়েক দফা বাড়ানোর পর আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ ছুটি বাড়তে পারে আরও। ইতোমধ্যে ১২ মাসের শিক্ষাবর্ষের প্রায় অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ‘রিকভারি প্ল্যান-২০২০’ গ্রহণ করছে সরকার। সে আলোকে নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের সিলেবাস ও কারিকুলাম নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা এসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, চলতি বছর প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি ছাড়াও সব পরীক্ষা বহাল থাকছে। সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষার্থীদের টানা দুই মাস পড়িয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষার বিষয় কাটছাঁট ও কিছু বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের একাধিক বিকল্প চিন্তা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তার ওপর সবকিছুই নির্ভর করবে। করোনার কারণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটিতে থাকছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যদি ছুটি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের দু-এক মাস সময় নিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করার চেষ্টা করব।’ এসময় করোনার প্রকোপ কমলে ও খোলার উপযোগী হলে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কারিকুলাম শাখা, দুই মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে একযোগে কাজ করছেন। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক, প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাস কমানো হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেন নির্ধারিত দক্ষতা অর্জন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে, সে বিষয়টিমাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যগুলো নিয়ে থাকবে সিলেবাস।
জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে- সে বিষয়টি মাথায় রেখে এ পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ছুটি কমিয়ে টানা দুই মাস ক্লাস চলবে। এরপর ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর সেপ্টেম্বরে না খোলা গেলে আগামী বছরের প্রথম দুই মাস বর্তমান শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে। সে ক্ষেত্রে বার্ষিক পরীক্ষা হবে ফেব্রুয়ারিতে। আর ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ হবে ১০ মাস।
জানা গেছে, গত মে মাসে এক বৈঠকে পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাবর্ষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল এনসিটিবি। দীর্ঘ ছুটিতে সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষাতে ওই প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জন নিয়েও আলোচনা হয়।
সেখানে বলা হয়, যেসব বিষয় না পড়লে শিক্ষার্থীরা পরের শ্রেণিতে গিয়ে বুঝতে পারবে না- সেগুলো চিহ্নিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে ছুটির পর সেগুলোর লেখাপড়া করাতে হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষা নিতে হবে নতুন সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘সিলেবাস না কমিয়ে শিক্ষাবর্ষ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ করা হলে আগামী মার্চ থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ যদি শুরু করা হয় ও ছুটি কমানো হয় তাহলে একাডেমিক কোনো ক্ষতি হবে না শিক্ষার্থীদের।’
এদিকে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিভিত্তিক নির্ধারিত ‘শিখন ফল’ ও ‘দক্ষতা’ অর্জনের দিকে লক্ষ্য রেখে সিলেবাস কমানোর পরিকল্পনা শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আলাদা করে সংক্ষিপ্ত করা হবে সিলেবাস। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও নেপকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘পাঁচ মাসের বন্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবুও অনেকে এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ক্ষতি পোষাতে সবকিছু সাজানো হবে নতুনভাবে।’
তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে সব ছুটি। দ্রুত সিলেবাস শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রেণিভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয় চিহ্নিত করা হবে। সে আলোকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে নেপ ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বছরের শুরুতেই পাঠপরিকল্পনা নির্ধারণ করা ছিল। সংশোধিত সিলেবাসে তাও রিভাইজ করতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষাবর্ষ যেন নষ্ট না হয়, সে লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ছুটি শেষ হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। তবে ছুটি আরও দীর্ঘ হলে পরবর্তী বছরের দু-এক মাস লাগতে পারে।
তিনি বলেন, পরের ক্লাসের প্রাসঙ্গিক বিষয় চিহ্নিত করে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হবে। দুটি স্তরে তা করা হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির জন্য একভাবে। আর পঞ্চম শ্রেণির জন্য আলাদাভাবে।
এ বিষয়ে নেপ মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে স্কুুল খুলবে, তা মাথায় রেখেই কাজ করছি। পুরো বছরের সিলেবাস যেন দুই থেকে তিন মাসে কাভার করা যায়, তা নিয়েই এগোচ্ছি।’