০৪ জুন ২০২০, ০৮:১১

৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের

  © ফাইল ফটো

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রায় ৩৬ বছরের চাওয়া পূরণ হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকের মর্যাদায় এসব মাদ্রাসা জাতীয়করণ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ কাজ করছে বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে শিগগিরই সুখবর পেতে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের চার হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয় গত বছর। এর মধ্যে নিবন্ধিত ও সরকারি অনুদান পাওয়া প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৫১৯টি। তবে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপেেএর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার।

গত বছরের ৯ মে কারিগরিসহ এসব মাদরাসার এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। তবে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুযোগ পায়নি।

এখন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মূল ধারায় আনতে হবে। সেজন্য জাতীয়করণ করা যায় কিনা, তা ভাবা হচ্ছে। তবে প্রক্রিয়ার বিষয় রয়েছে, তথ্য প্রয়োজন। জেলা প্রশাসন ও ইউএনওদের মাধ্যমে কিছু তথ্য এনেছি। এখন এই লক্ষ্যে (জাতীয়করণ) কাজ করছি।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষাকে মূল ধারার বাইরে রাখতে চায় না সরকার। তাই মাদরাসাগুলো প্রাথমিকের মর্যাদায় জাতীয়করণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। গত বছর সব স্বতন্ত্র মাদরাসার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কতজন শিক্ষক কাজ করেন সে তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতা/অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে সরকার। এতে ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের প্রাথমিক শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা হয়, ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রধানসহ মোট পাঁচ জন শিক্ষক থাকবেন।

ইবতেদায়ি প্রধান ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেডও ১১তম। তবে ইবতেদায়ি সহকারী ও কারি শিক্ষক পাবেন ১৬তম গ্রেডে। বর্তমানে নিবন্ধিত ইবতেদায়ি প্রধান শিক্ষকরা ২৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ২৩০০ টাকা সরকারি অনুদান পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার চার হাজার ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা দিতে বছরে সরকারের ব্যয় হবে ৩১০ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। নিবন্ধিত এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করলে ব্যয় হবে ১০৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই হাজার ৭৯৩টির জন্য ব্যয় হবে ২০১ কোটি ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭০ টাকা।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এস এম জয়নুল আবেদীন জেহাদী বলেন, ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে চার জন করে শিক্ষক নেওয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান তিন জন দিয়েও চলছে। সেক্ষেত্রে জাতীয়করণ হলে শুরুতে ৩০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন হবে না।

তিনি বলেন, ‘জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত চলতি বাজেটের ৩১১ কোটি টাকা সমন্বয় করে বেতন দিতে হবে শিক্ষকদের। আর আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে জাতীয়করণের জন্য। ২০১৮ সালের নীতিমালা জারির আগে ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের বর্তমান নিয়মে বেতন ভাতা দিতে হবে।’