কারিগরির ১৮শ কোটি টাকার স্টেপ প্রকল্পে লুটপাট, তদন্তে উচ্চতর কমিটি
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে নেওয়া প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (স্টেপ) কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২ জুন) এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মীর জাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত আদেশে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে যাাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের তদন্ত করে চিহ্নিত করতে হবে।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. বিল্লাল হোসেনকে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনজুর হাসান ভূঁইয়া এবং উপসচিব মিজানুর রহমান ভূঁইয়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।
কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, গত ডিসেম্বরে এ প্রকল্প শেষ হয়। প্রকল্প সমাপনী প্রতিবেদন শেষ না করেই এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) দু’বার অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তবে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় বদলি আদেশের পর তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
তবে যদি প্রকল্পে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টরা যেখানেই থাকুন, আইনত প্রকল্পের কাজে তিনি দায়বদ্ধ। দোষী চিহ্নিত হলে সবাইকে আইনের আওতায় আসতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে করা প্রতিবেদনে স্টেপ প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। এতে নানাভাবে প্রকল্পের অর্থ লুটের অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পে কয়েক কর্মকর্তার চক্র নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেনাকাটার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন। অপকর্ম সহজ করতে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন নামসর্বস্ব কোম্পানি।
এছাড়া প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের লক্ষ্যে কারিগরি খাতের প্রভাবশালী এক প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে কোম্পানিতে পরিচালক হিসেবে নেওয়া হয়। অথচ আলোচিত প্রতিষ্ঠানটিও প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়নকারী। তারা কাজের নামে ৯ কোটি টাকা পান। ওই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অসৎ কর্মকর্তারা লুটপাটে মেতে ওঠেন।
জানা গেছে, ওই কর্মকর্তারা পার্বত্য অঞ্চলে কয়েক একর জমি কিনলেও অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ বিষয়ে প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তারা উচ্চতর তদন্ত দাবি করেন। তাদের মতে, বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভুক্ত।
উল্লেখ্য, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক এবং কানাডার যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পে বরাদ্দ এক হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। এর একটি অংশ সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিউটে এককালীন মঞ্জুরি প্রদান। প্রথমে প্রত্যেক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটকে ৯ কোটি টাকা মঞ্জুরি দেওয়া হয়।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরের ধাপে বরাদ্দ কমিয়ে তিন কোটি করে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট একটি চক্রের যোগসাজশে নামমাত্র ল্যাব স্থাপন করে টাকা ছাড় করিয়ে নিয়েছে। এছাড়া যারা এ চক্রের মাধ্যমে কাজ করেনি তাদের বিল আটকে দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরো নানা অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তবে এখন পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত করবেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা।