২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০৯

নিষিদ্ধ হচ্ছে না কোচিং সেন্টার

  © সংগৃহীত

কোচিং সেন্টারের বৈধতা দিয়ে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সন্ধ্যার পর কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাবে। সুযোগ থাকছে শিক্ষকতারও। তবে নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে পড়াতে পারবেন না শিক্ষক। এছাড়া প্রস্তাবিত আইনে নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধই রাখা হয়েছে।

তবে সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টার চালু রাখলে সমস্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা অভিভাবকদের। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যার পর কোচিংয় চালু থাকলে পড়াশোনা তো হবেই না, বরং শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়তে পারে। বিশেষ করে ছাত্রীদের বেশি সমস্যা হবে। 

জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কোচিং, প্রাইভেট এবং নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই আইনের মাধ্যমে বন্ধ করা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে শিক্ষা আইন করার কাজ চলছে। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হওয়ার পর শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি আইন করতে এত দীর্ঘ সময় লাগার উদাহরণ নেই বলে অনেকে মনে করছেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিক্ষা আইনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, শিগগির খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর সেটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে খসড়ায় সামান্য এদিক-ওদিক হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

৯ বছর ধরে কোচিং সেন্টার ও নোট-গাইড বইয়ের কারণে শিক্ষা আইনের খসড়া ঘুরপাক খাচ্ছে।খসড়ায় বলা হয়েছে, নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। কেউ করলে তাঁকে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক যদি নোট ও গাইড কিনতে বা পাঠে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন বা উৎসাহ দেন, তাহলে প্রশাসনিক শাস্তি ভোগ করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে,কোচিং, প্রাইভেট এবং নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক পক্ষের তৎপরতায় ২০১৬ সালে শিক্ষা আইনের ‘দুর্বল’ খসড়া করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে ‘ছায়া শিক্ষার’ নামে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের বৈধতা দেওয়া হয়। সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশেরও সুযোগ রাখা হয়েছিল।

তখন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে খসড়াটি পর্যালোচনা করতে ফেরত আনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্ত ১০ মাস পর্যালোচনা করে ২০১৭ সালে খসড়াটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়। ১৯৮০ সালের একটি আইনেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট-গাইড নিষিদ্ধ।

সূত্র জানিয়েছে, পর্যালোচনা করে খসড়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে অভিভাবকদের লিখিত সম্মতি নিয়ে নীতিমালা বা নির্বাহী আদেশ অনুসরণ করে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে। কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিক বা অনলাইনেও প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং পাঠদান করাতে পারবেন না। করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

কোচিং সেন্টারের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা শিক্ষকতা করা নিষিদ্ধ গণ্য হবে না। তবে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দিনে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাবে না। তাহলে ওই কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হবে। কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ে পাঠদান করাতে পারবেন না।

অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের যুগ্ম–আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কোচিং সেন্টার সম্পর্কে প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। সন্ধ্যার পর কোচিং চলবে কি না, এটা তাঁদের ভাবনার বিষয় নয়। গুরুত্ব ও চাহিদা থাকলে মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে কোচিংয়ে আসবেন।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, ‘কোচিং সেন্টার পরিচালনাকে উৎসাহ দেওয়া যাবে না। কিন্তু মূল সমস্যা বর্তমান পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থায় কোচিং, নোট-গাইড ইত্যাদি পার্শ্ব বিষয় হিসেবে চলে আসছে। তাই মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে শিক্ষা-বাণিজ্যের অবসান ঘটাতে হবে।

আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দিতে পারবেন না। এ ছাড়া এমন আচরণ বা ভর্ৎসনা করবেন না, যা শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে। অবশ্য শিক্ষকদের কিছুটা সুরক্ষাও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর মঙ্গল বিবেচনায় শিক্ষার্থীকে নমনীয়ভাবে বা সহনীয় শাসন করা যাবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘নোট-গাইড নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ ইতিবাচক। কিন্তু কোচিং-বাণিজ্য চালু রেখে লাভ হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা সেখানেই হওয়া উচিত। যত দিন কোচিং নির্ভরতা থাকবে, তত দিন বিদ্যালয়ের পড়া বিদ্যালয়ে হবে না। নোট-গাইডের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারও বন্ধ করা উচিত।’