২৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৫৫

এত যাচাই-বাছাইয়ের পরও এমপিওভুক্তিতে ভুলভ্রান্তি!

  © সংগৃহীত

সোয়া এক বছর আগে সরকারি হয়েছে, এমন কলেজও এমপিওভুক্ত (বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ প্রদান) হয়েছে এবার। আবার অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার খবরে রাতারাতি ঘর তোলা হচ্ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পরও নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি নিয়ে চলছে নানামুখী সমালোচনা।

গত বুধবার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে দেশের ২ হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ৮৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিম্নস্তর (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) আগেই এমপিওভুক্ত ছিল। এবার এগুলোর নবম-দশম শ্রেণি এমপিওভুক্ত হয়েছে। আবার ‘যোগ্য না হওয়ায়’ দেশের ৩১টি উপজেলা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, নীতিমালার আলোকে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। ফলে যারা যোগ্য, তারাই এমপিওভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া যেসব তথ্যের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, তা ভুল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত কার্যকর হবে না।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজালাল কলেজ। অথচ ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ২৭১টি বেসরকারি কলেজের সঙ্গে এই কলেজটিও সরকারি হয়। এ কলেজের অধ্যাপক মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কলেজটি সরকারি হলেও এখনো শিক্ষকেরা সরকারি নিয়মে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এ ছাড়া কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। এখন ডিগ্রি স্তরকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, এমন হতে পারে যখন আবেদন করেছিল, তখন হয়তো সরকারি হয়নি। এখন সেটি এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বেশি আলোচিত হচ্ছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ‘নুতন হাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা নিয়ে। এ নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে দেখা যায়, ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের নতুনহাট বাজার–সংলগ্ন পঞ্চগড়-নতুন হাট সড়কের পাশে ‘নতুন হাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ’ নামে একটি সাইনবোর্ড বসানো। এর পেছনেই একটি ফাঁকা জায়গায় ইটের একটি ঘর তৈরিতে ব্যস্ত কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক। পাশেই কয়েকজন নলকূপ স্থাপনের কাজ করছেন। তবে তখন কলেজের কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি। কোথায় কলেজের অফিস ও শ্রেণিকক্ষ, তারও কোনো তথ্য দিতে পারলেন না স্থানীয় লোকজন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়ের বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ দেলদার রহমান ২০০৩ সালে ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক বছর আগে ভাড়া বাড়িতে কলেজটির কার্যক্রম শুরু করলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যক্রম ছিল না। কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো পঞ্চগড় বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে।

দেলদার রহমান মুঠোফোনে ওই কলেজের সভাপতি দাবি করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ তাঁর স্ত্রী। তাঁর দাবি, এ প্রতিষ্ঠানে ২০০ ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করে। শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। রাতারাতি ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে তাঁরা ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালিয়েছেন।

আরো পড়ুন: কলেজের ঘর উঠছে এমপিওভুক্তির পর!