বুয়েট শিক্ষক সমিতির তৎপরতাকে রহস্যজনক বললেন শিক্ষামন্ত্রী
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে এভাবে প্রাণ দেয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির তৎপরতাকে রহস্যজনক বলেছেন।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০১৯’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, তখন শিক্ষক ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কোথায় ছিলেন? তখন তারা কেন আন্দোলনে নামেনি? কেন এখন সবাই মিলে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন? এটি আমার কাছে রহস্যজনক।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বুয়েটের চলমান অস্থিরতা বুয়েট প্রশাসনের মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বুয়েট ভিসির পদত্যাগ করা না করাটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে না। এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বুয়েটের ছাত্ররা যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে তাতে আমাদের কিছু করার নেই। বুয়েট প্রশাসনের মাধ্যমে তা সমাধান করতে হবে।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “বুয়েটে ছাত্রলীগ ছাড়াও সেখানে অন্যান্য শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন রয়েছে। এর আগে তাদের কখনও আন্দোলনে নামতে দেখা যায়নি। বুয়েটের ছাত্র সংগঠন থাকবে কি থাকবে না সেটি বুয়েট প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না।”
বুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ভিসির আর কয়েক মাস মেয়াদ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সরানো হবে কি হবে না সেটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই। তবে আবরারের ঘটনায় আমি লজ্জিত। মেধাবী এমন একজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মারায় দেশের মানুষ মর্মাহত।”
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যায় শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আবরারকে লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে ইতোমধ্যে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ দশ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং উপাচার্যের পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলেছে শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবারও ছাত্রদের সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের নানা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং আবাসিক হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপাচার্যের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে আবরারকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে।
বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতেও একই ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। বুধবার বুয়েটের খেলার মাঠে সভার পর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “বুয়েট অ্যালামনাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এই নির্মম হত্যকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের নির্লিপ্ততা, অব্যবস্থাপনা ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থতার ফল। অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমের তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে উপাচার্যসহ বুয়েট প্রশাসনের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে মদদ জুগিয়েছে।”