২০ আগস্ট ২০১৯, ০৯:২৪

তিন বছরের জন্য এমপিও, আজ-কালের মধ্যেই ঘোষণা

কয়েক বছর এমপিওভুক্তি না করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনও করছেন শিক্ষকরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  জুলাই মাসে এমপিওর কথা বলা হলেও এখনো জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিষয়। যদিও চলতি সপ্তাহ অর্থ্যাৎ দুই-একদিনের মধ্যেই এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা ঘোষণা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিন শর্তে এক হাজার ৭৬৩ স্কুল ও কলেজকে অস্থায়ীভাবে এমপিওভুক্ত দেওয়া হচ্ছে।

সূত্রের তথ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার এমপিওভুক্তির নথিতে তার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সোমবার মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে এ নথি। এবার সারাদেশের এক হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজ এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবার শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে বেসরকারি নতুন শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রাথমিকভাবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে আগামী তিন বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে করা হচ্ছে তা। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি স্থগিত হয়ে যাবে। শর্তাবলির অন্যতম হলো, এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে পাবলিক পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ পাস করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওই বছরই সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে ভবিষ্যতে ভালো ফল করতে পারলে ফের তা চালু হবে। এ ছাড়া পরিপত্রে আরও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে একটি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম হিসেবে তৈরি করতে হবে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই এমপিওভুক্ত চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তবে ঘোষণা যখনই হোক না কেন জুলাই মাস থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সুবিধা পাবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, যে এক হাজার ৭৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে বাছাইয়ে টিকেছে এক হাজার ৬৪৯টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের তৈরি করে দেওয়া বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পর দেখা গেছে, সারাদেশের ৮৯টি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সমতার স্বার্থে ওইসব উপজেলায় এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ আলাদাভাবে এমপিওর জন্য যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার- এ চার শর্ত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর করে দেয়া হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি নম্বর পেয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়।

যদিও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের চাকরির বয়স শেষের পথে। আমরা চাই, সকল প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তি করা হোক।’