১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৫২

৬ মাসের মধ্যে পেনশন দিতে নির্দেশ আদালতের, মন্ত্রণালয় বলেছে টাকা নেই

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবসরের ছয় মাসের মধ্যে সব শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা পরিশোধ করতে হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।  বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে এই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নেই। এর ফলে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাছে এখনই পেনশন প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই। অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ  ট্রাস্টের পেন্ডিং আবেদনগুলোর অর্থ ছাড় করতে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা দরকার। সরকার বরাদ্দ দিয়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে এখান থেকে ২০০ কোটি টাকা খরচ করা যাবে। ফলে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আদালত পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা আমাদের আইন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবেলা করব।’

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন আদালত। তারও আগে ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। 

ওই রায়ে আদালত বলেন, শিক্ষকদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট (অবসরকালীন সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য তাদের অবসর ভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে।

এই অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

অবসরপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক-কর্মচারী জানিয়েছেন, মাসের পর মাস, কেউ কেউ বছরের পর বছর পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে চিকিৎসা, দৈনন্দিন ব্যয় ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনে তারা চরম সংকটে পড়েছেন। 

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, বাজেট সংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অধিকার বঞ্চিত করা চলতে পারে না। তাদের মতে, শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করায় আজ এই সংকট তৈরি হয়েছে।

তাদের মতে, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও সমাজে মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের তরুণরা শিক্ষা পেশায় আগ্রহ হারাতে পারেন।