‘মানবিক বিবেচনা’য় জাল সনদধারীদের চাকরি ফেরত দিতে সুপারিশ করছে ডিআইএ
কম্পিউটার সনদ জাল করে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ১২৩ জনের চাকরি ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি। যদিও এসব জাল সনদধারীকে শাস্তি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় স্কুল-কলেজ পরিদর্শনে এসব জাল সনদধারীকে শনাক্ত করেছিল ডিআইএ। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাকরিচ্যুত করা হয়। পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে চাকরিকালীন নেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে হঠাৎ করেই ‘মানবিক বিবেচনায়’ এসব জাল সনদধারীদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে ডিআইএ।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সনদ জালকারীদের চাকরি ফেরতের সুপারিশ করা হবে না জানিয়ে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কম্পিউটার সনদ জাল করেছেন এবং পরবর্তীতে সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ অর্জন করেছেন এমন শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে ১০০ জনের একটি তালিকা করেছি। এই তালিকায় আরও ২০ থেকে ২৫ জন যুক্ত হবেন। ২০০৫ সালের পূর্বে যারা এ ধরনের সনদ জাল করেছেন তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে’ বলেও দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, ২০২২ সালে ৬৭৮ জনের সনদ জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়। জাল সনদ চিহ্নিত হওয়াদের মধ্যে ৫১০ জনের নিবন্ধন সনদ, ১২৩ জনের কম্পিউটার, ১৫ জনের সাচিবিক বিদ্যা, ৫ জনের গ্রন্থাগার বিজ্ঞান, ৫ জনের বিডিএস, একজনের বিএড এবং ১৭ জনের অন্যান্য সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়। ২০২৩ সালের ১৮ মে এসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত এবং বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে শিক্ষকরা হাইকোর্টে ৮৭টি রিট আবেদন করেন। যেখানে পক্ষভুক্ত হয়েছেন ২৩০ জন। এর মধ্যে ২৬ জন কম্পিউটার শিক্ষককে সাময়িকভাবে এমপিও সুবিধা দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালত আদেশ দেন। মামলাগুলো বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এসব শিক্ষককে হঠাৎ চাকরিতে পুনর্বহাল করার প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে ডিআইএ। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে যাদের সনদ জাল ছিল তারা চাকরিতে প্রবেশের পর বৈধভাবে সনদ অর্জন করেছেন। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করবে। কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয়।’
ডিআইএ পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
এদিকে জাল সনদধারীদের চাকরি ফেরত দেওয়ার সুপারিশের ঘটনায় প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য ঘুষ হিসেবে এই বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়ে তাদের চাকরি ফেরতের বিষয়ে সুপারিশ করেছেন তিনি বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর অভিযোগটি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
হঠাৎ করে জাল সনদধারীদের চাকরি ফেরতের সুপারিশ এবং এ বিষয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে ডিআইএর পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। একজন দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে এমন বিতর্কিত সুপারিশ এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ শিক্ষা প্রশাসনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর জমা হওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘১৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। কারা, কী উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ করেছেন সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে আমার বক্তব্য জানিয়েছি। চাকরি ফেরতের সুপারিশ করেছি কেবলমাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে।’