০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৪

ফের শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ!

নুরুল ইসলাম নাহিদ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মহাজোটের সকল সংসদ সদস্য শপথ নেবেন। এরপর শুরু হবে মন্ত্রিসভা গঠন প্রক্রিয়া। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন এই মন্ত্রিসভা গঠিত হবে।

কিন্তু কারা থাকছেন মন্ত্রিসভায়? কিংবা বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্য থেকে কারা বাদ পড়ছেন, সে আলোচনা এখন সর্বত্র। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনের নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্রের তথ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর সরকার গঠনে শেখ হাসিনা যেমন সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন; এবারও সেই ধরণের চমক আসছে। সূত্রের তথ্য, বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, আইসিটিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো ও ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করতে নতুনদেরই এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে ফের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সম্ভাবনা রয়েছে অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারেরও। চলতি মেয়াদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও বর্তমান স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীই যে স্পীকার হচ্ছেন; সেটিও শতভাগ নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৯ এই ১০ বছরে ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করেছে সরকার। এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। সরকারের গণমুখী কার্যক্রমের ফলে বিভিন্নখাতে অভূতপূর্ব সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এখন সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ। স্কুলে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।

তথ্যমতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের ২৩ হাজার ৩০০টি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া উপকরণ বিতরণ শুরু হয়েছে। ‘তথ্য প্রযুক্তি’ নতুন বিষয় হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রসরে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ৪৪টি সরকারি ও শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবার জন্য সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত একসঙ্গে ৩০ হাজার প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে। মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করেছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেলে বেতন প্রদান ছাড়াও বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হচ্ছে।

এছাড়াও পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছে বর্তমান সরকার। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাদরাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। সাধারণ বিষয়ের মতো তথ্য ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয় চালু করা হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। মাদরাসার উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে বিশ্বমানের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে নানা অর্জনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আবারো পেতে পারেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ- এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৪৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আছেন।