এশিয়ার সবচেয়ে তরুণ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। নবীন-প্রবীণের সমারোহে কিছুটা ভারসাম্য এসেছে টানা চারবার গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের মন্ত্রীসভায়। এর মধ্যে সাবেক অনেক হেভিওয়েট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাদ পড়ার পাশাপাশি নতুন করে দায়িত্ব পেয়েছেন তুলনামূলক তরুণ এবং অভিজ্ঞরা।
এবারের সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে জায়গা পেয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী। এর আগে সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ওপরই এসেছে পুরো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
শিক্ষার সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জড়িত। আমরা কর্মসংস্থানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট জেনারেশনের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে দেশের শিক্ষা পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই—মহিবুল হাসান চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও চট্টলবীর খ্যাত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরীর বর্তমান বয়স ৪০ বছরের কিছু বেশি। বয়সের হিসেবে তিনি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ, সবচেয়ে তরুণও বটে। সংখ্যার হিসেবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ তিনি।
প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও শিক্ষায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীদের বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বর্তমান বয়স ৫৪ বছর, পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী রানা তানভীর হুসেনের বয়স ৭৪ বছর, ভুটানের শিক্ষামন্ত্রী জয় বীর রায়ের বর্তমান বয়স ৫০ বছর; তবে ভুটানের সদ্য গঠিত সরকারের মন্ত্রীসভায় এ দায়িত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এর বাইরে সুশীল প্রেমজয়ন্ত ৬৯ বছর বয়সে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সদ্য আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠা শ্রীলঙ্কায়।
আরও পড়ুন: ভিন্নধর্মী কর্মসূচি দিয়ে যাত্রা শুরু করছেন শিক্ষামন্ত্রী
এর বাইরে আফগানিস্তানের তালেবান শাসিত মন্ত্রীসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা হাবিবুল্লাহ আঘার বর্তমান বয়স প্রায় ৭০ বছর। এশিয়ার শিক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে তিনি তুলনামূলক বেশি প্রবীণ শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মালদ্বীপের শিক্ষামন্ত্রী ইসমাইল শফিউ’র বর্তমান বয়স ৬৯ বছর; তবে এর বাইরেও দেশটিতে ৫০ বছরের বেশি বয়সী একজন উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী রয়েছেন।
এছাড়াও বর্তমানে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন হাকুবুন শিমোমুরা, তার বর্তমান বয়স প্রায় ৭০ বছর। এর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষামন্ত্রী লি জু হো’র বর্তমান বয়স ৬২ বছর। এশিয়ার আরেক দেশ নেপালের শিক্ষামন্ত্রী অশোক রায়ের বর্তমান বয়স ৬৬ বছর। দেশগুলোর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট ও ব্যক্তিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয় ঘেঁটে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এশিয়ার বাইরে থাকা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষামন্ত্রী জেসন ক্লেয়ারের বর্তমান বয়স ৫১ বছর। আর কানাডার সংবিধানের অধীনে শিক্ষার সকল স্তরের একচেটিয়া দায়িত্ব রয়েছে প্রাদেশিক সরকারগুলোর। ফেডারেল পর্যায়ে শিক্ষার কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই দেশটিতে। দেশটির প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রীরা যে সংস্থার অধীনে সংঘবদ্ধ তার বর্তমান চেয়ারম্যান স্টিফেন লেকসের বর্তমান বয়স বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীর থেকে মাত্র ৫ মাস কম। এছাড়াও স্টিফেন লেকস বর্তমানে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীও।
আরও পড়ুন: নতুন কারিকুলাম ও মূল্যায়নে পরিবর্তন আসতে পারে: শিক্ষামন্ত্রী
জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি-লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শীর্ষ গন্তব্যের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মিগুয়েল কার্ডোনা। দেশটির প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতি-নির্ভর সরকার কাঠামোয় গঠিত মন্ত্রীসভায় শিক্ষার শীর্ষ এ কর্তার বর্তমান বয়স ৪৮ বছর।
১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। আর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মন্ত্রীসভার এই তরুণ সদস্য।
এর আগে ১৯৯৪ সাল থেকে টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও মহিবুল হাসান চৌধুরী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন।
আরও পড়ুন: দেশে ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে
নতুন মন্ত্রীসভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, নতুন সরকার কেবল শুরু হলো। এখানে আমাকে নতুন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আমি সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাবিদদের সাথে নিয়ে আমরা এই পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কারণ শিক্ষার সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জড়িত। আমরা কর্মসংস্থানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট জেনারেশনের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। মূলত কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নিজেরাও পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে চাই।