৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি চান অনশনকারীরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এক দফা দাবিতে ১২ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা চান অনশন চালিয়ে যেতে।

 

অনশনে অংশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ২০০-এর বেশি অনশনকারী অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ২৫ জুন থেকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু হয়।

সম্প্রতি সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যাপারে যে নীতিমালা জারি করেছে, তাতে অনেক নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঞ্চিত থেকে যাবে। নীতিমালায় পাসের হার, শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ অনেক শর্তই উল্লেখ আছে, যা অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নেই।

জানা যায়, সারা দেশে ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেতন পান না। অথচ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সরকার কর্তৃক সনদ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীরা শ্রমের মূল্য পাচ্ছেন না।

১২ জুন সরকার ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরুণা বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর এটি জারি করে সরকার। এ নীতিমালায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণের বিষয়ে নানা শর্তারোপ করা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কমর্চারীর সংখ্যা, পরীক্ষার ফল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে এলাকায় অবস্থিত সেখানকার জনসংখ্যার পরিমাণ, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব প্রভৃতি।

এসব শর্ত মানতে রাজি নন এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, এ নীতিমালা শুধু কঠিনই নয়, বরং আমাদের দাবিকে দূরে ছুড়ে ফেলার অপকৌশল মাত্র।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘এ নীতিমালায় আমরা হতাশ হয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের জন্য কৌশলগতভাবে অন্তরায় তৈরি করেছে। এমনটি হয়তো প্রধানমন্ত্রীও অবগত নন।’

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তকরণের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি নীতিমালা প্রত্যাশা করছি। তাদের এমপিওভুক্তির ঘোষণা না এলে অনশন চালিয়ে যাব।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্তি কার্যকর হলে অনেক প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পড়বে না। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তিতে কোনো গতিও হবে না। তাই মূল আপত্তিই এখন এ নীতিমালা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান নীতিমালার অধীনে এমপিওভুক্তি হলে আমরা বঞ্চিতই থেকে যাব। নীতিমালায় পাসের হার, শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ অনেক শর্তই উল্লেখ আছে, যা অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নেই। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক পুরানো এবং বোর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এরপরও কেন শর্ত। আমরা নতুন করে শর্ত কিংবা কোনো নিয়মের ফাঁদে পড়তে চাই না। আগে তো আমাদের বেতন দিক। আমাদের এমপিওভুক্ত করা হোক। এরপর না আমাদের ওপর শর্ত দেওয়াটা মানা যায়।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘এ নীতিমালা নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এককভাবে কিছু করার নেই। কারণ এর সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় জড়িত। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত করতে যেখান থেকে অর্থ আসবে, সেই অর্থ মন্ত্রণালয় নীতিমালা করার আগে আমাদের অনেক শর্ত জুড়ে দেয়। সে আলোকেই আমরা এটি প্রণয়ন করেছি।’

এ নীতিমালায় শিক্ষার্থীবিষয়ক শতের্র মধ্যে রয়েছে- শহরে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় যদি সহশিক্ষা বা শুধু বালক হয়, তবে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে, আর বালিকা হলে ১৮০। গ্রামে হলে যথাক্রমে ১৫০ ও ১২০ জন হতে হবে, আর শহরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় যদি সহশিক্ষা বা শুধু বালক হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হতে হবে ৩০০। আর শুধু বালিকা হলে ২০০ জন। একই প্রতিষ্ঠান গ্রামে হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হতে হবে যথাক্রমে ২০০ ও ১০০ জন করে।

শহরে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যদি সহশিক্ষা বা শুধু বালক হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৪৫০ এবং বালিকা হলে হবে ২০০। আর একই প্রতিষ্ঠান গ্রামে হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে যথাক্রমে ৩২০ ও ১০০। শহরে উচ্চমাধ্যমিক কলেজ যদি সহশিক্ষা বা শুধু বালক হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ২০০। আর বালিকা হলে হবে ১৫০।

একই প্রতিষ্ঠান গ্রামে হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে যথাক্রমে ১৫০ ও ১২০। শহরে স্নাতক পর্যায়ের কলেজ যদি সহশিক্ষা বা শুধু বালক হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ২৫০। আর বালিকা হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ২০০। গ্রামের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা হবে যথাক্রমে ২০০ ও ১৫০।

পরীক্ষার ফলবিষয়ক শর্তের মধ্যে রয়েছে- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় শহরে হলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হতে হবে কমপক্ষে ৬০। পাসের হার হতে হবে ৭০ শতাংশ। আর গ্রামে এ হার যথাক্রমে ৪০ ও ৭০ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক কলেজের ক্ষেত্রে একই শর্ত রাখা হয়েছে এমপিও পাওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে। এছাড়া প্রতিটি ক্যাটাগরির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীর বিষয়ে যেসব শর্ত রাখা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮, মাধ্যমিকে ২২, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩০, উচ্চমাধ্যমিক কলেজে ১৭ এবং স্নাতক (পাস) পর্যায়ের কলেজে ২৮ শিক্ষক-কমর্চারী থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণ বিষয়ে ভৌগোলিক দূরত্ব ও এলাকার জনসংখ্যাবিষয়ক বেশকিছু শর্ত রাখা হয়েছে। নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে শহরে ১ কিলোমিটার, গ্রামে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হতে হবে।

মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে শহরে ১ কিলোমিটার ও গ্রামে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে শহরে ২ কিলোমিটার ও গ্রামে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে হতে হবে। এছাড়া নিম্নমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতির ক্ষেত্রে স্কুল এলাকায় ১০ হাজার জনসংখ্যা থাকতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে থাকতে হবে ৭৫ হাজার জনসংখ্যা।


সর্বশেষ সংবাদ