স্কুলে স্কুলে গলাকাটা ভর্তি ফি আদায়ের প্রমাণ মিলেছে
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমে নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গলাকাটা ভর্তি ফি আদায়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং কমিটি। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ফি’তে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ১৮ ডিসেম্বর (রবিবার) থেকে শুরু হয়ে চলে ২১ ডিসেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত। অপরদিকে অপেক্ষমান তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালায় বলা আছে, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর উপজেলা এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না। বাস্তবে দেখা গেছে, দেশের বেশিরভাগ স্কুলই এ নীতিমালা মানেনি।
এ বছর নৈরাজ্য বন্ধে ঢাকা মহানগরীর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চারটি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ১৬টি মনিটরিং কমিটি গঠন করে। সারাদেশের জন্য মোট ৫৫টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। ১৯ থেকে ২১ ডিসেম্বর তিন দিন স্কুলে ভর্তি কার্যক্রমের শেষ দিনে ভর্তি ফি বেশি নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে মনিটরিং টিম গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তিন দিনের ভর্তি কার্যক্রমের শেষ দিনে এসব টিম গঠন করায় ততক্ষণে অভিভাবকদের পকেট কাটার কাজ সম্পন্ন করে ফেলে নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: ৭ মাসের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি সভাপতির, এলাকায় হাস্যরস
জানা যায়, চারজন উপসচিবের নেতৃত্বে চারটি মনিটরিং কমিটি করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ফি আদায় করছে কিনা, তা যাচাইয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে এসব কমিটি। ঢাকা মহানগরীর মোট ১৬টি মনিটরিং কমিটি, আটটি বিভাগীয় মনিটরিং কমিটি, ৫৫টি জেলা মনিটরিং কমিটি জেলা সদরের এবং উপজেলা মনিটরিং কমিটি উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনিটরিং করে মাউশি অধিদপ্তরে রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
মনিটরিং কমিটি-৩-এর দায়িত্ব ছিল ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ মনিটরিং করা। এ কমিটির প্রধান উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে পাওয়া সব তথ্যসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবারই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ভর্তি, টিউশন, সেশন ফি, বেতন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। রাজধানীর ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিবছর এ অভিযোগ ওঠে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গ্রিনফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চেতনা মডেল একাডেমি, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, প্রিপারেটরি গ্রামার স্কুল, কসমো স্কুল, ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বনফুল গ্রিনহার্ট আদিবাসী কলেজ, এস ও এস হারম্যান মেইনার কলেজ এবং শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে কসমো স্কুলের অধ্যক্ষ এস এম মাহবুব-উল আলম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী আমরা ভর্তি ফি নিচ্ছি প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে কার্যক্রমভিত্তিক পাঠদানে শিখন উপকরণ এবং আউটিংয়ে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। সে তুলনায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৩৫ হাজার টাকা অনেক কম। প্রতিষ্ঠানটিতে উন্নতমানের পাঠদানব্যবস্থা থাকায় অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে খরচের তুলনার সুযোগ নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, মহাপরিচালকের নির্দেশনায় আমরা সেই ব্যবস্থা নেব। মহাপরিচালকের এখতিয়ারের বাইরে কিছু থাকলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।