টিউশন ফি আদায়ে বেপরোয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হতাশ অভিভাবকরা

করোনার ছুটি শুরুর আগে ক্লাস করছে শিশুরা
করোনার ছুটি শুরুর আগে ক্লাস করছে শিশুরা  © ফাইল ফটো

দেশে করোনা মহামারির কারণে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শিক্ষাকার্যক্রমকে ধরে রাখতে অনলাইনে নেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস। কিন্তু এই দুঃসময়েও টিউশন-ফি আদায় চলছে অনেকটা বেপরোয়াভাবে। এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন-ফি ছাড়াও অন্যান্য খাতের ফি আদায় করা হচ্ছে। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, করোনাকালে রাজধানীর ম্যাপল লিফ স্কুলে নবম শ্রেণির টিউশন ফি আট হাজার ৫৫০ টাকা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ টাকা ছাড় দিয়েছে। আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন ফিও আদায় করা হয়েছে রাজধানীর টিকাটুলির শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে।

এছাড়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে টিউশনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের ফি আদায় করা হয়েছে। আবার কোনো কোনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু বিলম্ব ফি মাফ করে অন্যান্য ফি শতভাগ আদায় করা হচ্ছে।

জানা গেছে, মহামারিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চিত্র পাল্টে গেছে। নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের থেকে ফি আদায় করছে। দেখা গেছে কোনো প্রতিষ্ঠান ইউটিউবে আপলোড করে কিংবা মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে আর কোনোটি জুমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ফেসবুকে শিক্ষকের পাঠদানের ভিডিও তুলে দেয়া হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে। ফি পরিশোধ করতে না পারলে পরীক্ষায় যুক্ত করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষকে এ ব্যাপারে মানবিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল উভয়পক্ষ মানবিক হবে। অভিভাবকরা শিক্ষকের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করবেন। আর টিফিন বা হোস্টেল চার্জসহ যেসব খাতে শিক্ষার্থীকে সেবা দেয়া যায়নি সেই ফি প্রতিষ্ঠান নেবে না। কিন্তু সেবা না দেয়া খাতে ফি আদায় অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে বলব। তবে উচ্চ আদালতে এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় আদেশ জারি করা যায়নি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, অনলাইনে এসব পাঠ আর পরীক্ষার বেশির ভাগই নামমাত্র। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস আর পরীক্ষাকে জিম্মি করার হাতিয়ার বানিয়েছে। পাওয়া অর্থ পরিশোধ না করলে ক্লাসের লিঙ্ক দেয়া হচ্ছে না। ফি আদায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই বেপরোয়া।

ম্যাপল লিফ স্কুলের অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিভাবক ফি কমানোর আবেদন করলে হাস্যকরভাবে ৫০ টাকা কমিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সেবা শিক্ষার্থীরা না পেলেও সেসব খাতের ফি আদায় করা হচ্ছে।

রাজধানীর আরেক স্কুলের অভিভাবক জানান, আগস্টে প্রতিষ্ঠানটিতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের খরচ না থাকলেও ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। এছাড়া জুন পর্যন্ত টিউশন ফি বাধ্যতামূলক আদায় করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বহু অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন, কারও চাকরি থাকলেও প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা আটকে আছে। আবার অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে সংসারে টানাপোড়নের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকাকালীন ছেলে-মেয়ের টিউশন ফি সম্পূর্ণ আদায় করলে আমাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।

এদিকে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির জন্য ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বর্তমানে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটে। কেউ চাকরিচ্যুত আবার কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের পক্ষে টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণে ৬ মাসের টিউশন ফি মওকুফের দাবি করে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের অভিভাবকরা আন্দোলন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে কেউ চাকরিচ্যুত আবার কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর ফলে অভিভাবকদের পক্ষে টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে, তা এখনও অনিশ্চিত।