আগা খান পুরস্কার জেতা স্কুলটি এখন ভুতুড়ে, ঘুরে বেড়াচ্ছে ইঁদুর
মাত্র এক বছর আগে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার-২০১৯ পুরস্কার জিতেছিল কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ কানারচরের আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টটি। এর স্থপতি ছিলেন সাইফ উল হক। রাশিয়ার তাতারস্তানের রাজধানী কাজানে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
অথচ সেই অসাধারণ স্থাপত্যটি মাত্র এক বছর পরে এসে একটি ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে। আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টের সর্বত্র বিচরণ করছে ইঁদুর। বন্যার পানিতে স্কুলটির অনেক অংশ ভেঙে গেছে। অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জায়গাটি।
অথচ গত বছর সম্মানজনক আগা খান পুরস্কার পেয়েছিল বিভিন্ন দেশের যে ছয়টি প্রকল্প, তার মধ্যে আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট অন্যতম। বিজয়ীরা ১০ লাখ ডলার অর্থমূল্যের পুরস্কার পান। আর্কেডিয়া এডুকেশন ছাড়াও গাজীপুরের আম্বার ডেনিম লুম শেড মনোনয়ন পেয়েছিল।
আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্টের বর্তমান হাল নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম। তিনি ফেসবুকে স্কুলটির বেশকিছু ছবি শেয়ার করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি এটিকে একটি কলঙ্ক বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ধলেশ্বরী নদীর তীরে বাঁশের তৈরি স্কুলটি আমাদের দেশের শিক্ষার ভবিষ্যত হিসেবে মনে করা হচ্ছিল, যেখানে স্থলভাগের বড় অংশ সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর আগা খান পুরস্কার জেতা স্কুলটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পুরস্কারটি এ খাতের অত্যন্ত সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটির বড় অংশ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময়ে কেউ স্কুলটি পরিদর্শন করেনি। ধলেশ্বরীতে মাছ ধরা এক জেলে জানিয়েছেন, সেখানে এখন ইঁদুর বিচরণ করে। আমি তাকে বলেছিলাম, এই অসাধারণ প্রকল্পটি এক বছর আগে আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে। তখন তিনি উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘তখন ওই জেলে আমাকে ভেঙে যাও বাঁশগুলো দেখালেন। এছাড়া ড্রামগুলোও দেখালেন যেগুলো উল্টেপাল্টে পড়ে ছিল। তিনি বললেন, এটি একটি কলঙ্ক।’
আর্কেডিয়া এডুকেশন প্রজেক্ট একটি উভচর স্কুল। স্কুলটি এমন এলাকায় তৈরি করা হয়, যেখানে বছরের কয়েক মাস পানির নিচে থাকে। পানি আসলে স্কুলটি ভেসে থাকে। যখন পানি সরে গেলে মাটিতে থাকে। এটি তৈরি করা হয়েছে ড্রাম, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে।
আগা খান অ্যাওয়ার্ড স্থাপত্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে প্রাচীন ও সম্মানজনক পুরস্কার। পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। প্রতি তিন বছর পর সম্মাননা দেওয়া হয়। সমকালীন নকশা, গৃহায়ণ, সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিকই বিবেচনা করা হয় এতে। স্থাপত্যের নান্দনিক দিক খেয়াল করে নয়, জীবনের গুণগত মানোন্নয়নের দিকেও এতে খেয়াল রাখা হয়।