অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী: বিশ্বব্যাংকের জরিপ
চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সকল শিক্ষা কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পড়াশোনা চালু করা হয়েছে। তবে স্কুল খোলা থাকার সময়ে তারা যে পরিমাণ সময় পড়াশোনায় ব্যয় করত ছুটির মধ্যে সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের করা এক অনলাইন জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল সরকারিভাবে টেলিভিশনে (সংসদ টিভি) ক্লাস নেয়া হলেও জরিপকালে দেখা গেছে মাত্র অর্ধেক শিক্ষার্থী এসব ক্লাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে অনলাইন ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারছে মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৯ ভাগ এই ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে।
গভেষণায় প্রায় দুই হাজারের বেশি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ফোনে সাক্ষাত্কার নিয়ে এই জরিপটি করা হয়েছে। এর আগে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া এ বন্ধের মেয়াদ কয়েক ধাপে বেড়েছে। করোনা মহামারির শুরু থেকে দীর্ঘ মাস মাসের ওপরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর। দীর্ঘ এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ‘টিভি বেজড লার্নি ইন বাংলাদেশ:ইজ ইট রিচিং স্টুডেন্ট?’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসের ১৮ তারিখ হতে জুন মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত নবম শ্রেণির ২ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে এই সাক্ষাত্কারগুলো নেওয়া হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহের এই পরিবারগুলোর মাত্র ১৫ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এজন্য টেলিভিশন শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জরিপকালে দেখা গেছে মাত্র ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর টেলিভিশন দেখার সুযোগ রয়েছে। সংসদ টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে আরো কম, মাত্র ৩৯ শতাংশের।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারির এই সময়ে এসব শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গেছে। ২৮ শতাংশ পরিবারের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এ সময় কমেছে। করোনার প্রভাবে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিকল্প নানা উপায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অনলাইন ভার্চুয়াল পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রান্তিক পর্যায়ে এই সুবিধা পৌঁছানো যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, দেশে অনলাইন ভার্চুয়াল পদ্ধতি প্রান্তিক পর্যায়ে না পৌঁছালেও আশার বিষয় হলো—পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সচেতন দেখা গেছে। জরিপকালে ৯০ ভাগ পরিবারের মধ্যে এই সচেতনতা দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থীর মায়েরা পর্যাপ্ত শিক্ষিত না হয়েও সন্তানদের সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। তবে পর্যাপ্ত শিক্ষিত না হওয়ায় অর্ধেক পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের এই সহায়তা করতে পারছেন না।
জরিপকালে মহামারি এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে না যাওয়ায় এই সময়টা তারা কি করছে তা জানার চেষ্টা করা হয়।
এতে দেখা যায়, ৫২ ভাগ শিক্ষার্থী আগের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় পরিবারের গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করছে। শিক্ষা বহির্ভূত খেলাধুলা, সামাজিক যোগাযোগেও সময় ব্যয় করছে অনেকেই।