মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন চান না এমপিওভুক্ত বেশিরভাগ শিক্ষক
নতুন নিয়মে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হবে। বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত, সহজ ও ব্যাংকের ঝামেলা এড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা।
তবে এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষক। তারা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিলে জটিলতা বাড়বে। বিশেষ করে টাকা তুলতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে তাদের। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নানা ধরনের প্রতারণার নজিরও রয়েছে। কোনো কারণে এক মাসের বেতন হারালে ওই শিক্ষকের পরিবারকে দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সুবিধাটি পেতে শিক্ষকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্টের তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাতে টাকা পাঠাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এমপিওভুক্ত খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হবে। সরকারের ১০০ টাকা পাঠাতে খরচ হবে ৭০-৮০ পয়সা। সব মিলিয়ে সরকারের খরচ পড়বে অন্তত ২০০ কোটি টাকা।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শিক্ষকদের ফেসবুককেন্দ্রীক বিভিন্ন গ্রুপে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। রেজাউল হক খান নামে একজন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এতে আরো ঝামেলা বা ক্যাশ আউটে খরচ বাড়বে না তো!’
ইভান তালুকদার নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ওই দুইশ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে খরচ না করে পারলে বাড়ি ভাড়া দেন, তাহলে শিক্ষকদের কাজে আসবে। আর বিড়ম্বনা থেকে সত্যি শিক্ষকদের বাঁচাতে চাইলে বাৎসরিক স্বল্প চার্জ দিয়ে তাদের এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা উঠানোর ব্যবস্থা করে দিন। নতুন করে জটিলতা বাড়াবেন না।’
এমপিওভুক্ত এক শিক্ষক দম্পতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখন যেভাবে ব্যাংকে বেতন দেওয়া হচ্ছে, তাতে সুবিধা বেশি। যখন ইচ্ছা বেতন তুলতে পারি। টাকা হারানোর ঝুঁকিও নেই। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন দিলে আমাদের নানাভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হবে।’ এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান তারা।
সিরাজগঞ্জের একজন প্রবীন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আমরা অনেকেই মোবাইলই ঠিকমতো চালাতে পারি না। সেখানে মোবাইলে টাকা দিলে আমাদের আরও সমস্যায় পড়তে হবে। ব্যাংকেই বেতন দেয়া চালু থাক।’
এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন আরো দ্রুত ও সহজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সে জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানোর বিষয়ে কাজ চলছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
গত অক্টোবরে নতুন দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন প্রায় চার লাখ ৯৬ হাজার। এমপিওভুক্ত এসব শিক্ষকের বেতন ব্যাংকে দেওয়া হয়। চেকের মাধ্যমে ব্যাংকে এ টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকগুলো ওই টাকা ছাড়ে গড়িমসি করে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সরাসরি শিক্ষকদের টাকা পাঠানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা দিতে পারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সবার অ্যাকাউন্ট খোলা হলে তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় তালিকায় থাকা নামের সঙ্গে, মোবাইল নম্বর, এনআইডির তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে টাকা পাঠানোর কাজ শুরু হবে।