করোনা: স্কুল-কলেজ খোলার বিপক্ষে অধিকাংশ মানুষ
করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ এই ছুটি আরও একদফা বাড়িয়ে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। এরমধ্যেও কিছু মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, শিল্প-কারখানা, গণপরিবহন সবকিছু খুলে দেওয়া গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সমস্যা কোথায়।
এর আলোকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কী ভাবছেন। পাঠকদের নিকট প্রশ্ন ছিল, ‘করোনাভাইরাস: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?’ এতে প্রায় ২২ ঘন্টায় অন্তত এক হাজার পাঠক তাদের মতামত জানিয়েছেন।
ওই মতামতের আলোকে দেখা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল ও কলেজ খোলার ক্ষেত্রে প্রায় সবার নিকট থেকেই একই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্কুল-কলেজ খোলার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে মত তাদের। অবশ্য পাঠকদের খুব সামান্য অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজও খুলে দেওয়ার পক্ষে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পক্ষে। এছাড়া অনলাইন ক্লাসও চলারও পক্ষে তারা। তাদের মতে, হলে সব ধরণের সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া যেতে পারে। এর পক্ষে তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, সেশনজট, মানসিক চাপ, অনেক শিক্ষার্থীর আয় বন্ধ হয়ে নিজে পরিবার বিপদে পড়া, বাড়িতে নানা সমস্যা তৈরি হওয়াসহ নানা বিষয়ের কথা বলেছেন। অবশ্য হলের সুরক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত অনেকেই দিতে পারেননি।
এই শিক্ষার্থীদেরই একটি অংশ আবার এখনই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিপক্ষে। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ হলগুলোতে চারজনের রুমে থাকেন আট জন। আর গণরুমে ২০ থেকে ৭০/৮০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে এসব হল খুলে দেওয়া হলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি বলে মত তাদের। ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলছেন তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়ে শরীফ নামে একজন লিখেছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিংবা টিকা দেয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকা উচিত। অনলাইনে কীভাবে আরো প্রোডাক্টিভভাবে ক্লাস নেয়া যায়, এটা নিয়ে ভাবা উচিত। ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা, অনলাইনে ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ, ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রণোদনা ইত্যাদি দেয়া উচিত। কর্মসংস্থানের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনা করে কোনো লাভ নেই। কর্মসংস্থান বন্ধ থাকলে মানুষ না খেয়ে মরবে।’
স্কুল ও কলেজ পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ রাখার পক্ষে অধিকাংশ পাঠক। শাহেদ উল্লাহ মন্তব্য করেছেন, ‘কলেজ ও স্কুল খোলা এ বছরের জন্য মোটেই উচিৎ হবে না।’ সৌরভ মাজহার লিখেছেন, ‘স্কুল-কলেজ পরে খুললেও অবশ্যই এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া উচিৎ।’
এম কে আলম লিখেছেন, ‘বিশ্বিবদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া যায়। তবে স্কুল আরো কিছু দিন বন্ধ থাকুক।’ আর মাযীন রাবী লিখেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত হবে না। কারণ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে এবং শীতকালে এটি আরও ভয়াবহ হতে পারে। কাজেই, ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকিটা নেওয়া উচিৎ হবে না। মনে হয় না আর এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে।’
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাঠকদের একটি অংশ কলেজও খুলে দেওয়ার পক্ষে। হাফিজুল হক লিখেছেন, ‘স্কুল বাদে কলেজ-ইউনিভার্সিটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা যেতে পারে আপাতত। নতুবা সেশনজট চরম আকারে দেখা দেবে ৷’
মোহাম্মদ আমান উল্লাহ লিখেছেন, ‘ভার্সিটি ও কলেজ খোলা উচিত। সব কিছুই চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন চলবে না। শিশুদের নিয়ে ঘুরতে গেলে কি স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সোহেল রানা নামে একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া ভালো হবে। আর হলের চিন্তা করলে উদাহরণস্বরূপ পোশাক কারখানাগুলো দেখতে হবে। সেখানে কিন্তু সেরকম সংক্রমণ নেই। আর নিজের নিরাপত্তাটা বাংলাদেশে নিজেকেই দেখতে হবে। আমরা তো আমাদেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
ওই মন্তব্যে হলের স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সানজিদা ইসলাম নামে একজন জবাব দিয়েছেন, ‘গণরুমে নতুন আসা ব্যাচ থাকে, তাদের জন্য গণরুমে পার্টিশন করে দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন হলে, হলগুলোতে এবং ক্লাসরুমে দিনে দু’বার জীবাণুনাশক স্প্রে করলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে, মূল ফটকে জীবানুনাশক ট্যানেলের ব্যবস্থা করলে, একই সাথে অনলাইন ক্লাস চললে সহজেই ক্লাস করা যাবে। আর সবাই মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার জানি, দৈনন্দিন খাবারে ভিটামিন-সি রাখাও সচেতনতার অংশ।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে সাব্বির আহমেদ নামে একজন মতামত দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা উচিত:
১. ক্লাসের প্রতিটা সেকশনকে দুই ভাগে ভাগ করা।
২. ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।
৩. আবাসিক হলগুলোর অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বের করে দেওয়া।
৪. গণরুমের শিক্ষার্থীদের সিটের ব্যবস্থা করা।
৫. হলের ক্যান্টিন সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৬. ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নত করা।
৭. আলাদা কোয়ারেন্টিন ইউনিট করা।
৮. শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য বাস সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৯. বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানো।
১০. কিছুদিনের জন্য ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মিছিল মিটিং বন্ধ করা।’
ফাতেমা-তুজ-জোহরা মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। কারণ কোনো কিছুই বন্ধ নেই। সব কিছু খুলে দিয়ে করোনা স্বাভাবিক করা যাবে না।’
তৃষ্ণা বড়ুয়া লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াটা ঠিক হবে। কেননা এমনটা যদি চলতেই থাকে তাহলে অধিকাংশ স্টুডেন্ট হতাশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেন্টাল স্ট্রেস সাফার করবে। তাছাড়া যে ভঙ্গিতে দেশে প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে মনে হয় না খুব শিগগিরই ভাইরাসমুক্ত হওয়া যাবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা কিছুটা টাফ হলেও ইম্পসিবল কিন্তু না। অথবা বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে সব কার্যক্রম চালু করতে হবে, হোক সেটা অনলাইনে।’
পাঠকদের একটি অংশ আবার ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষে। আল সাবিব শান্ত নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাক। প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসন করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত প্রসারিত করা হোক।’
শাহিন ইকবাল নাঈম মন্তব্য করেছেন, ‘ভ্যাকসিন আসা এবং পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। কারণ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। বেঁচে থাকলে জীবনে পড়ালেখা অনেক করা যাবে। মারা গেলে তো সব শেষ।’