ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফি নিয়ে নৈরাজ্য, কঠোর হচ্ছে সরকার
দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোয় করোনাকালেও ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হতে দেখা গেছে। বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত এসব স্কুল অবশ্য টিউশন-ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে শুরু থেকে বেপরোয়া বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ফি বকেয়া থাকায় করোনাকালে অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এগুলোকে ‘নৈরাজ্’য বলছেন অনেকে।
এসব গুরুতর অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। গত ২০ আগস্ট বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাঁ স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্কুলগুলোর নিবন্ধন নিশ্চিত করা এবং নীতিমালা অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বিধিমালা-২০১৭ অনুযায়ী বিদেশী কারিকুলামে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু নির্দেশনার আলোকে কিছু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। নির্দেশনায় নিবন্ধনের আবেদন করতে বলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতেও নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাঁ সাংবাদিকদেরকে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল যে ফি নিচ্ছে, তা যথাযথ নয়। তাদের কমিটি বোর্ড থেকেও অনুমোদিত নয়। ইচ্ছামতো তারা ফি নির্ধারণ করতে পারে না। নিয়মনীতি মেনেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে তাদের।
গত ২৯ জুলাই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিবন্ধিত এবং নিবন্ধনহীন কতটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আছে তার তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, বোর্ডের অধীনে ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেল ১১৮টি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেক বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে হিসাবরক্ষণ ও বিবরণী প্রস্তুত করে আর্থিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ম্যানেজিং কমিটি অর্থবছর শেষে আয়-ব্যয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অর্ডার-১৯৭৩ অনুযায়ী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের হিসাব বিবরণী সম্পাদন করবে। এছাড়া রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবে। এটি পালন করা হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, শ্রেণিভেদে আদায় করা টিউশন, ভর্তি, খেলাধূলা, গ্রন্থাগার, মুদ্রণসহ অন্যান্য ফির পরিমাণ ও বিবরণী উল্লেখ করার নিয়ম আছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে না। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যয়-বিবরণী উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের প্রেসিডেন্ট একেএম আশরাফুল হক বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরাও চাই স্কুলগুলো নিয়মের মধ্যে আসুক। স্কুলগুলো পরিচালনায় পৃথক বডি থাকবে, টিউশন-ফি যৌক্তিক হবে। এগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছি আমরা।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের আয়-ব্যয়ের বিবরণী প্রকাশ ও ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অনুমোদন ইতিবাচক। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নিবন্ধন ছাড়া কীভাবে ইংলিশ মিডিয়াম গজিয়ে ওঠে। তারা ৫০ হাজার টাকা থেকে লাখ পর্যন্ত টিউশন-ফি নিচ্ছে। এজন্য সরকারের মনিটরিং কমিটি থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাঁ বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। তাদের ফি যথাযথ হয়নি, ইচ্ছা করলেই ফি নির্ধারণ করতে পারেন না। তারা ভুল স্বীকার করেছেন। তারা বলেছে, কমিটি অনুমোদন করে নেবেন।’