শ্রমিকের কাজ করে আর ঋণ নিয়ে জীবন চলছে বেসরকারি শিক্ষকদের
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৭ AM , আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৭ AM
করোনাভাইরাস অনেকের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে কাজের ধরন, জীবিকার চিত্র। অনেক মানুষ সামান্য অবলম্বন দিয়ে, ঋণ নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এমনই একজন রংপুরের শঠিবাড়ি সান সাইন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক নিশান মাহমুদ। পরিবারের বড় ছেলে তিনি, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। করোনা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় হাতে তুলে নিয়েছেন কোদাল। দিন মজুরি করে চলছে তার সংসার।
মাস্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিশান। কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। নিশান বলেন, এছাড়া আর উপায় দেখছি না, জীবনতো বাঁচাতে হবে। টিউশনিও নেই, খুব বিপদে আছি। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করণে বেসরকারি লাখো শিক্ষক।
রাজধানীর শুক্রাবাদের স্কুল শিক্ষিকা রেহানা আক্তার। তিনি বাধ্য হয়ে এখন নাড়ু বিক্রি করছেন অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে। মোহাম্মদপুরের গ্রিন লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক কাওসার হোসেন বিক্রি করছেন মৌসুমী ফল। করোনার প্রকোপে নাজেহাল অবস্থা তার। এছাড়া অনেক শিক্ষক ঋণ করে চলার কথাও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সাফায়েত হোসেন বলেন, প্রায় চারমাস ধরে বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায় ব্যক্তি মালিকানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে ৬০ হাজার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে যাবে। এ খাতকে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
আর কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ারা ভূঞা বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা টিউশন ফি দিচ্ছেন না। তাই শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার শিক্ষক শ্যামল কুমার বর্মণ। ২০ বছর ধরে অধিকারীপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে আশায় বুক বেঁধে রয়েছি, কবে হবে এমপিওভুক্তি। এখন করোনায় ভিন্ন আয়ের পথটাও বন্ধ হয়ে গেছে তারা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়া গ্রামের শাহিদুজ্জামান। তিনি এনটিআরসিএর মাধ্যমে স্বস্তিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর থেকেই নিয়মিত পাঠদান চালিয়ে যান তিনি। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। কিন্তু ১৮ মাস পার হলেও তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি।
শাহিদুজ্জামান জানান, স্বস্তিপুর মাদ্রাসাটি দাখিল স্তর পর্যন্ত, লেকচারার পদ নেই। ইবতেদায়ী বিভাগে ৪ জন এমপিওভুক্তির যোগ্য। মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালা মোতাবেক আমার পদটি আইনসিদ্ধ ও এমপিও’র যোগ্য। এখন ছোটভাই চাকরি করে, তা দিয়ে কোনোমতে জীবন চলছে। ছোটভাইয়ের আয়ে চলতে খারাপ লাগে।
এসব বিষয়ে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, চার কোটি শিক্ষার্থী, ১৪ লাখ শিক্ষক ও আট লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯৭ শতাংশ বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে ব্যয় নির্বাহ হয়। সেই আয় এখন বন্ধ। ফলে খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন শিক্ষকরা।
অবশ্য শিক্ষকদের এককালীন পাঁচ হাজার ও কর্মচারীদের দুই হাজার পাঁচশ’ করে টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারেউচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সৈয়দ গোলাম ফারুখ বলেন, প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া কলেজ পর্যায়ে দুই মাসের বেতন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মমিনুর রশিদ আমিন বলেন, জেলা প্রশাসকদের নিকট শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছিলাম। তারা পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাই। এই অর্থ প্রদানে এক লাখ ৬০ হাজার চেক দেয়া হয়েছে। এই অর্থ শিক্ষকরা পাচ্ছেন।