করোনাভাইরাসে শিক্ষাঝুঁকিতে ৬১ দেশের ১০৮ কোটি শিক্ষার্থী
চীন থেকে গোটা বিশ্বে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যাওয়া নোভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) শিক্ষাব্যবস্থা বড় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১২৩ দেশে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৪২ হাজার।
করোনাভাইরাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বড় জনসমাগমের জায়গা হওয়ায় এতে তার প্রভাব পড়েছে। ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৬১ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৩৯টি দেশে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৪২ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থীর।
আর আঞ্চলিকভাবে আংশিক বন্ধ করা হয়েছে ২২টি দেশে। এসব দেশে ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৭ জন শিক্ষার্থী ঝুঁকিতে রয়েছে। সবমিলিয়ে পুরোপুরি ও আংশিক বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ১০৮ কোটি ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থী ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে মনে করছে সরকার। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, মাঠে সমাবেশ না করা, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ অন্য অনুষ্ঠান সীমিত করা ইত্যাদি। পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শ অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই সব করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আইইডিসিআরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে।
এছাড়া শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আপাতত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে না। যেহেতু এক থেকে ৪০ বছর বয়সীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার হার কম তাই জনমনে যাতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় সেজন্য স্কুল-কলেজ খোলা রাখা হচ্ছে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকরা যদি মনে করেন তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না, সেটা তারা করতে পারেন।’
তবে দেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনও শুরু হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় ক্লাস করা থেকে বিরত থাকছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পক্ষে এমন মত দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। তিনি লিখেছেন, ‘বৈশ্বিক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গ্রীষ্মকালীন ছুটি জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আনা দরকার এবং তা এখনই; মহাসর্বনাশের পূর্বেই। এইসব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, অনেক বেশি ।’
একই দাবি তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন শুক্রবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে জুনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি আগাম দেয়ার কথা ভাবা যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যেসব দেশে বা অঞ্চলে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে সেখানকার পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি এখনো এক নয়। করোনা বিস্তারকে মহামারি ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো ভালো। সরকারের প্রস্তুতি আছে, স্কুল বন্ধ করা কোনো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা না করেঘরে-বাইরে সতর্ক থাকাটা বেশি জরুরি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি), ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) নির্দেশনা দিয়েছে।
তারমধ্যে রয়েছে, শিশুরা কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা; হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন পদ্ধতি প্রচার করা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ; বিদ্যালয় ভবন বিশেষত পানীয় এবং স্যানিটেশন সুবিধা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা; বাতাসের প্রবাহ ও অবাধ চলাচল বাড়ানো; শিশুদের সুস্থতার দিকে নজর রাখা এবং অসুস্থ হলে বিদ্যালয়ে যেতে না দেয়া, টিস্যু পেপার বা কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে কাশি বা হাঁচি দেওয়া ইত্যাদি।