এমপিওভুক্ত ভুঁইফোড় ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের কপাল পুড়ছে
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১৭ AM , আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৪ AM
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণার পর বিতর্কের মধ্যেই বেরিয়ে আসছে অনিয়মের নতুন তথ্য-প্রমাণ। সংসদীয় কমিটির ক্ষোভের পর শতাধিক সংসদ সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করে এমপিও পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন।
এছাড়া বহু সংসদ সদস্য ভুঁইফোড়, বিতর্কিত ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের এমপিও দিতে লিখিত দিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমপিও পুনর্বিবেচনা করার জন্য সবমিলিয়ে প্রায় শতাধিক সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শতাধিক ডিও লেটারসহ আবেদনের ফাইল নিষ্পত্তি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী, এমপি এমনকি সচিব পর্যায়ের প্রভাবশালীরা সরাসরি কিংবা মোবাইলে প্রতিনিয়ত তাদের আবেদন নিষ্পত্তির কথা জানতে চাইছেন। বাধ্য হয়ে জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়। জানা গেছে, তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় অস্থিত্বহীন, ভূঁইফোড় ও যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, জাতীয়করণকৃত, স্বীকৃতিবিহীন এবং ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এমনকি ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানও। গত অক্টোবরের পর থেকে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের এমপিও পুনর্বিবেচনা চেয়ে ডিও লেটারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আসছেন সংসদ সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১২ ডিসেম্বর এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির বৈঠক হবে। এর কয়েকদিন পরেই যে প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়েছে, সে বিষয়ে রিভাইজ করা হবে। সংসদ সদস্যদের ডিও লেটারগুলোর যৌক্তিক সমাধান দেয়া হবে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হাজির হচ্ছেন অনেকেই। গত রোববারই মাত্র ২০ মিনিটে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে হাজির হন ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের সাবেক একজন সিনিয়র আমলা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এবারের এমপিওভুক্তি নিয়ে বেশি বিতর্ক উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামত নেয়া হয়নি। নীতিমালার দোহাই দিয়ে অযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।’
কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন, ‘এমপিও নিয়ে সংসদ সদস্যদের মতামত না নেয়ায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি। বরং স্থানীয়ভাবে তাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের পর সমালোচনার যাচাই বাছাইয়ের জন্য গত ১৩ নভেম্বর একটি কমিটি এবং ১৪ নভেম্বর অপর কমিটি গঠন করা হয়।২০ কর্মদিবসের মধ্যে এমপিওভুক্তির তালিকার সঠিকতা যাচাই করে তাদেরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, যাচাইকৃত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতি ১০০টির মধ্যে কমপক্ষে ৫টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভুল পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘৮টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ছয়টি বোর্ডের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। বাকি ২টি ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যাচাই সম্পন্ন করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভুল আসলে এবং প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভূঁইফোড় ও ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের দাবি জানিয়ে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী বলেন, ‘আমার সংসদীয় এলাকায় কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কলেজের নাম ব্যবহার করে কোচিং বাণিজ্য করে আসছে। উক্ত ভুয়া কলেজের অধ্যক্ষ শরাফত আলী মন্ডল আমার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্রিশাল কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের কম্পিউটার ডেমোনেস্ট্রেটর। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তথ্য গোপন করে অন্যায়ভাবে এমপিওভুক্ত করেছে।’ ওই মহলকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের সুপারিশ করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও দেন তিনি।
গত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমপিওভুক্তি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিষ্ঠা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’