সন্তানের শিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ব্যয় বাংলাদেশী অভিভাবকদের!
বাংলাদেশে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় এ খরচের হার বেশি। এমনকি সন্তানের প্রাইভেট ও কোচিংয়ের খরচ চালাতে গিয়ে অভিভাবকের আয়ের ২৯ শতাংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শহরের অভিভাবকদের ব্যয় তুলনামূলক বেশি বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
তবে এর থেকেও গুরুতর খবর হলো, দেশে সন্তানের শিক্ষার জন্য অভিভাবকেরা আনুপাতিকহারে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ব্যয় করছেন বলে জানা যাচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সরকারের খরচ অনেক বেশি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারের খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের আয়ও কম। এ হিসেবে তাদেরকে তুলনামূলক বেশি ব্যয় করতে হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৮ সালে অভিভাবকদের খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এতে সবচেয়ে বেশি খরচ কম্পিউটারে পরিবারপ্রতি মাসে প্রায় ২৯৯ ডলার। পোশাকসহ অন্যান্য ব্যয় ২৮৬ ডলার। সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাসে শিক্ষার্থীপ্রতি অভিভাবকের খরচ ৯৬৮ ডলার বা প্রায় ৭৯ হাজার টাকা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের গড় বাৎসরিক আয় ৬০ হাজার ২০০ ডলার। প্রতিমাসে পাঁচ হাজার ১৬ ডলার আয় হিসেবে সন্তানের জন্য এর পাঁচ দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যয় করেন তারা। অপরদিকে বাংলাদেশে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য অভিভাবকের ব্যয় হয় প্রায় সাত হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। গড় ১১ হাজার টাকা বা প্রায় ১২৭ ডলার।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আর অভিভাবকদের বছরে গড় আয় এক হাজার ৯০০ ডলার বা মাসিক ১৫৮ ডলার। এ হিসেবে অভিভাবকরা সন্তানের শিক্ষায় আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যয় করেন। যা আনুপাতিকহারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিভাবকদের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি।
এতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে সন্তানের খরচ মিটিয়ে সংসার ব্যয় মেটাতে তাদেরকে হিমসিম খেতে হয়। আর দরিদ্র শ্রেণীর অনেক পরিবারের সন্তান তো পড়াশোনা শেষই করতে পারেন না।
এমনকি প্রাথমিক পর্যায় থেকে প্রায় ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিক পর্যায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশি দেশ ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও বাংলাদেশের অভিভাবকদের তুলনামূলক বেশি খরচ করতে হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
অভিভাবকদের মতে, স্কুলে পড়ার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য কমানো দরকার। এতে সন্তানের শিক্ষার জন্য অভিভাবকদের ব্যয় অনেক কমবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে ব্যয় তুলনামূলক কমে আসে বলে অনেকে জানিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীই তখন নিজের খরচ চালানোর চেষ্টা করেন। অবশ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ অনেক বেশি।
শিক্ষাবিদদের মতে, অনেক স্কুল প্রাইভেট-কোচিং ও গাইড কিনতে বাধ্য করছে। ফলে অভিভাবকের ব্যয় বাড়ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা সচ্ছলভাবে চলতে পারলে তারা স্কুলে শিক্ষাদানে বেশি মনোযোগ দেবেন। সরকারকে সেভাবে পরিকল্পনা করতে হবে বলেও তারা মনে করেন।
আরো পড়ুন: সন্তানের প্রাইভেট ও কোচিংয়েই চলে যায় অভিভাবকের আয়ের ২৯ শতাংশ