বৃদ্ধাশ্রমেই আশ্রয় হলো জাবি অধ্যাপকের ঘটনাটি ৬ বছর পূর্বের
সম্প্রতি, “অবশেষে বৃদ্ধাশ্রমেই আশ্রয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ ভুইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তবে টিডিসি ফ্যাক্টচেকের অনুসন্ধান বলছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে প্রচার করা সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ঘটনাটি প্রায় ৬ বছর পূর্বের।
২০১৫ সালের ১৮ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ ‘ওরা আমারে এতো কষ্ট দেয় কেন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের সংসারে দুই ছেলে, এক মেয়ে। তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে সবার বড়, নাম রেজিনা ইয়াসিন, আমেরিকা প্রবাসী। এরপর বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) ইফতেখার হাসান। সবার ছোট ছেলে রাকিব ইফতেখার হাসান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।”
“জীবনে এতো কিছু থাকার পরও আজ তার দু’চোখে অন্ধকার। থাকেন আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে। ঈদের দিন কেমন কেটেছে প্রবীণদের, খোঁজ নিতে নামাজ পরেই যাওয়া হয় প্রবীণ নিবাসে। পাঁচ তলায় উঠতেই দেখি বৃদ্ধ বয়সী এক ভদ্রলোক ভেতর দিয়ে হাঁটা হাঁটি করছেন। সালাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন চিনতে পারলাম না বাবা। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর রুমের ভেতর নিয়ে বসতে দেন চেয়ারে, এরপর বলতে থাকেন নিজের দুঃখ গাথা জীবনের কথা।”
প্রতিবেদনে তার পরিচয়ে বলা হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালের বয়স ৭০। দীর্ঘ ১৭ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সুনামের সঙ্গে। ২০০৬ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকেই কিছুদিন ভালোই চলছি অধ্যাপকের।”
পুরো প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে
এদিকে, ২০১৫ সালে অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিবেদনটি নিয়ে ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা উঠে আসে। পরে তার সন্তানের দাবি, ‘প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিকভাবে আমরা অনেক হেয় হয়েছি, আর না’।
এরপর তার পরিবারের স্বজনরা ৩১ জুলাই আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে যান। সেখানে অধ্যাপক আউয়ালসহ ১০/১২ জন বসে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়।
আলোচনাকালে অধ্যাপক আউয়াল বলেছিলেন, অতীতের সব ভুলে যাও, আমাকে ক্ষমা করো। ‘ফরগিভ মি, ফরগট ইট! আমার সন্তানরা আমাকে এখন যেখানে রাখতে চায়, আমি সেখানেই থাকতে চাই। ’
এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে
এদিকে, ২০১৮ সালেও অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে কিছু ভুইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল আবারও সেই সংবাদটি প্রকাশ করে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন। গত বছরও (২০২১) ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল এরকম একটি সংবাদ।
২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশর্ট দেখুন নিচে-
২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর বার্তা২৪.কমে ‘প্রফেসর আউয়াল নিয়ে সত্যটা জানুন’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রফেসর আউয়াল আসলে স্বেচ্ছায় প্রবীণ নিবাসে ছিলেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি একাকিত্ব জীবন যাপন বেছে নেন, থাকতে চান স্বাধীনভাবে। সেই ইচ্ছা শক্তিতেই চলে আসেন প্রবীণ নিবাসে। আত্মীয়স্বজন এবং প্রবীণ নিবাস থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও তিনি সেখান থেকে চলে যেতে ওই সময়ে রাজি ছিলেন না। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে তিনি তার বর্তমান ঠিকানায় বসবাস করে আসছেন । তার বসবাসের খরচপত্র তার সন্তানরা বহন করেন। সন্তান ও ৫ নাতনীসহ তার বিশাল পরিবার। সবাই যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “নিউজটি (২০১৫ সালে) প্রকাশ হওয়ার পর তার সন্তানরা যে যেখানে আছেন সেখানে সামাজিকভাবে হেয় হতে থাকেন। তাদের অবস্থান ও পিতার ইচ্ছা পরিষ্কার করতে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ড. এম আব্দুল আউয়ালের বড় ছেলে আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে এই প্রতিবেদক ও অধ্যাপক আউয়ালের পরিবারের আরও সদস্যসহ বসেন। সেখানে সবকিছু পরিষ্কার করা হয়। এরপর ২ আগস্ট প্রকাশিত হয় ‘সন্তানেরা যেখানে চায় সেখানেই থাকতে চাই’। কিন্তু কিছু মানুষ পরের সংশোধনীটা না দেখে পূর্বের প্রতিবেদনটিই কপি করে ফেসবুক, টুইটার ও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করছেন, যা অধ্যাপক আউয়াল ও তার সন্তানদের আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন করছে এবং তা সেই ২০১৫ থেকে শুরু করে ২০২০ সালে এসেও!!!”
“বিষয়টি পরিষ্কার করতে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বসে আবারও পরিষ্কার করেন অধ্যাপক আউয়াল। তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারাও আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে। কাজেই প্রবীণ নিবাসে থাকা না থাকা আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। এখানে আমার সন্তানদের মতামতের প্রয়োজন ছিল না। আমার বিষয়ে আমিই সবসময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সম্পত্তি ও টাকা পয়সায় সন্তানদের কখনো কোনো হাত ছিল না কারণ এসবে সবসময় আমার কর্তৃত্ব ও দখলে ছিল। আমার দুর্ভাগ্যেই আমি সব হারিয়েছি। তাই ভবিষ্যতে যেন কেউ এনিয়ে কোনো কিছু না করে, কেউ যেন ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে কোনো বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ না করে। আর যদি পুনরায় কেউ তা করতে চায় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুরো প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে
অর্থাৎ, ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই ৭০ বছর বয়সী আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালের ঘটনাকে পূর্বের তারিখ উল্লেখ ব্যতীত অপ্রাসঙ্গিকভাবে সম্প্রতি নতুন করে বিভিন্ন ভুইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।