২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১০

শিক্ষা কোটায় কলেজে চান্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি-ব্যবসায়ীর ছেলে-মেয়ে

শিক্ষার্থী-অভিভাবক  © ফাইল ফটো

উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষা কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন ২৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত এই কোটায় ব্যবসায়ী ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সন্তানদের ভর্তির নজিরও মিলেছে। শুধু তাই নয়; এ কোটায় মোট আসন ১০০টি হলেও ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৭৭ জন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা তৈরি হওয়ায় এই কোটার প্রযোজ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড।

বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ কোটা অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১ শতাংশ কোটা শিক্ষা কোটা-১ এবং শিক্ষা কোটা-২ এর জন্য। 

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মো. মজিবর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছি। এই নীতিমালার বাইরে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ নেই। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শিক্ষা কোটা-১ রয়েছে। এ ক্যাটেগরিতে আবেদন করতে পারেন কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ের ভেতরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা। আর শিক্ষা কোটা-২-এ আবেদন করার সুযোগ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ২৮টি দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানের জন্য। অভিযোগ উঠেছে এই কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।

ঢাকা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটায় (শিক্ষা কোটা-১) নির্বাচিত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের মধ্যে এ বছর এসএসসি পাস করেছেন ১০০ জনের মত। ফলে প্রশ্ন উঠেছে অবশিষ্ট প্রায় দুই হাজার আসনে কাদের ভর্তি করা হয়েছে।

শিক্ষা কোটা-১ এ ভর্তির ক্ষেত্রে এমন অনিয়ম সামনে আসার পর শিক্ষা ক্যাডারদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষা কোটা-২-এর ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। গতকাল রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা কোটা-২ এ ভর্তি স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১০ আগস্ট আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি কর্তৃক জারি করা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইন আবেদনে এডুকেশন কোটা-২ (ইকিউ-২) স্থগিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পাঠানো হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটার যথেচ্ছ ব্যবহার শিক্ষার্থী নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মেধা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ভর্তির জায়গায় কোটা প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে প্রকৃত যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা কোটার সুবাদে ভালো কলেজে জায়গা পাচ্ছে। এর মধ্যে বাছাই প্রক্রিয়ায় অনিয়ম পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের স্বার্থে শিক্ষা কোটা বহাল রেখে কার্যত এটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বছরের ভর্তি নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তা বহাল রেখেছে। তার মতে, যেহেতু এখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য আলাদা কোটা নেই, তাই এই কোটাগুলোর যৌক্তিকতাও টিকে নেই।