কলেজ ভর্তি

ভুয়া আবেদনের ফাঁদে ভর্তিচ্ছুরা

সম্প্রতি মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরানো ১৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীরা গন্তব্য পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া। ভর্তিযুদ্ধ নয়, মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে এ প্রতিযোগিতা করতে হবে তাদের। এবার মেধার ভিত্তিতে শতভাগ ভর্তি করা হবে। এরপর বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত (কোটা) শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য ১১ শতাংশ আসন অতিরিক্ত সংরক্ষিত থাকবে। ১৩ মে থেকে শুরু হয়েছে এ ভর্তি প্রক্রিয়া আর চলবে ২৪ মে পর্যন্ত।

মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে পছন্দের কলেজে ‘ভর্তির চয়েস’ দিয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। তারা ভুয়া আবেদনের ফাঁদে পড়ে দারস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের কাছে। তাছাড়া, সার্ভার সমস্যা, ফিরতি এসএমএস না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

তারা জানান, অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে আগেই তাদের অন্য কোনও কলেজে তাদের ভর্তির আবেদন হয়ে গেছে। কোনও কলেজে আবেদন করা হয়েছে তাও জানতে পারছেন না। ফলে তারা পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। তাছাড়া, অনেকেই অনলাইনে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে মুঠোফোনে একটি সিকিউরিটি কোড আসার কথা থাকলেও সেটি না আসায় বিপাকে পড়ছেন। গত কয়েকদিন যাবত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আসতে দেখা যায় অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় কোন কোন কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিজেরাই নিজেদের কলেজ ‘চয়েস’ দিয়ে আবেদন করে রেখে থাকতে পারেন। বোর্ড বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য একটি সেলও খোলা হয়েছে। কোন কলেজের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর হুশিয়ারিও দেয়া হয়।

সোমবার বাংলাদেশ আন্ত: শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এক জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনুমতি ব্যতিত অথবা প্রতারণা করে অনলাইন বা এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করবে, এমন সুনিদ্দির্ষ্ট প্রামণ পাওয়া গেলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বাতিলসহ কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করা ছাত্রী পুষ্পিতা রায় বলেন, অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখি আগেই সেটি অন কেউ করে রাখছে। তাই ভর্তির আবেদন বাতিল করে বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করা প্রিয়ম ধর বলেন, অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার পর মুঠোফোনে একটি ৬ ডিজিটের সিকিউরিটি কোড আসার কথা। কিন্তু আবেদনের পাঁচদিন পরও আমার সেটি আসেনি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, প্রতিবার কিছু ভুয়া আবেদন পড়ে। সাধারণত এটা কলেজ কর্তৃপক্ষ করে থাকে। তবে একই কলেজে একের অধিক কোনও ভুয়া আবেদনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা সেই অভিযোগটি আমলে নিচ্ছি এবং ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবারের একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়, একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে এবারও সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের জন্য পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কলেজে ভর্তির জন্য প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ১০ জুন। এরপর আরও দুই দফায় আবেদন গ্রহণ করা হবে। ২৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করে ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে শতভাগ আসন এবার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। মেধার ভিত্তিতে ভর্তির পর বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো আবেদনকারী থাকলে মোট আসনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ৩ শতাংশ বিভাগীয় ও জেলা সদর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দপ্তরগুলোর সদস্যদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সন্তানদের জন্য ০.৫ শতাংশ এবং প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য ০.৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। প্রসঙ্গত, গত ৬ মে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ১০ বোর্ডে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।

 


সর্বশেষ সংবাদ