পদের চেয়েও কর্মকর্তা বেশি, তবুও সচিবদের পদোন্নতির তোড়জোড়
প্রশাসনে পদের চেয়ে প্রায় কর্মকর্তা রয়েছে তিনগুণ বেশি। এরপরও গত ৫ জুন ১৩২ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। একইভাবে প্রশাসন ক্যাডারের ১৩ ব্যাচকে অতিরিক্ত সচিব ও ২৭ ব্যাচকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিতদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। কারণ সিনিয়রদের আগে জুনিয়রদের পদোন্নতি দিলে বঞ্চিতদের সংখ্যা বাড়বে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের চেয়ে অনেক বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে আগেই। করোনা সংকটের মধ্যে আবারও জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। মূলত প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের চাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দুই ব্যাচকে পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ১৩০টি পদের বিপরীতে ৪৫৭ জন কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিবের ৪৫০টি পদের বিপরীতে ৭৩৫ জন রয়েছেন। একইভাবে উপসচিবের এক হাজার ছয়টি পদের বিপরীতে এক হাজার ৫৫৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। ফলে পদ না থাকার পরও পদোন্নতি পেয়ে তাদের আগের পদেই কাজ করতে হবে অথবা ওএসডি হয়ে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে পদ ছাড়াও পদোন্নতি হয়। রাজনীতিকীকরণের ফলে প্রশাসন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এটা করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো। এক দল অপর দলের চেয়ে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রধান হলেন মন্ত্রী। আর প্রশাসনিক প্রধান ও প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার হলেন সচিব। সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করেন অতিরিক্ত সচিব। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ পদ ছিল প্রায় ২১টি। এখন একটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগে রয়েছেন আট থেকে নয়জন অতিরিক্ত সচিব। জনপ্রশাসনে কাজ করছেন নয়জন। আর মন্ত্রিপরিষদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগে কাজ করছেন আটজন করে।
অথচ অনুবিভাগের প্রধান যুগ্ম সচিব, অধিশাখার প্রধান উপসচিব ও শাখার প্রধান সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকার কথা। তবে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শতভাগ অনুবিভাগে যুগ্ম সচিবের পদে কাজ করছেন অতিরিক্ত সচিব। একইভাবে অন্য পদেও পদোন্নতি হওয়ায় সচিবালয়ে অনেক কর্মকর্তার বসারও জায়গা নেই।
বঞ্চিত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের চাকরি আছে ছয় মাস থেকে দেড় বছর। বেশিরভাগ কর্মকর্তা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পিআরএলে যাবেন। যারা পদোন্নতিবঞ্চিত, তাদের প্রায় প্রত্যেকে বর্তমান সরকারের আমলেই যুগ্ম সচিব হয়েছেন। অতিরিক্ত সচিবের পদ কম থাকায় অবসরের আগে পদোন্নতির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
নবম, দশম ও ১১তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের মধ্যে অনেকে ডিসি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কারণে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এ জন্য তাদের পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনার দাবি তাদের।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে কাজ করেন। এ সুযোগে তারা প্রভাবশালী হয়ে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসনে তদবির করেন। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সিনিয়র কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব না হলেও জুনিয়রদের পদোন্নতির ঘটনা বাড়ছে।
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত লোকবল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদেরকে বলেন, অভিজ্ঞতার কারণে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং চূড়ান্ত হলে এটা আর হবে না বলে জানান তিনি।