০৬ মে ২০২০, ১২:০৯

বেতন নেই, বন্ধ টিউশন ফি: বিপাকে নন-এমপিও শিক্ষকরা

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন প্রায় তিন হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারের কাছ থেকে কোন বেতন-ভাতা পান না তারা। ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন, টিউশন ফি সংগ্রহ করেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশন ফিও নিতে পারছে না। করোনার কঠিন সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার তাগিদে সরকারের কাছে প্রণোদনা চান তারা।

এদিকে সম্প্রতি ২ হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। একইসঙ্গে এমপিও কোডসহ বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে নন-এমপিও হিসেবেই। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সংকটে পড়েছেন সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই তালিকায় রয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয়করণ না হওয়া বেসরকারি প্রাথমিক, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা।

জাতীয়করণ তালিকা থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারের কাছে কোনো বেতন-ভাতা পান না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অনেক বিপাকের সম্মুখীন হচ্ছেন। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, এই শিক্ষকরা স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। তাদের অনেককে অর্ধাহারে-অনাহারে ঘরে থাকতে হচ্ছে। করোনার সময়ে বিশেষ প্রণোদনার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তাদের।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে দেশে প্রায় ২৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গোলাম নবী বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৫ শতাংশ ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয়। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পায় না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রণোদনা ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচিয়ে রাখা কষ্টকর।

দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও সংকটে রয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ শিক্ষক কোনো বেতন পান না। অল্প কিছু শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা পান সরকারের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে এ প্রক্রিয়া থেমে গেছে। করোনা সংকটে বিশেষ প্রণোদনা চান এসব ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩৫০টি এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে নন-এমপিও অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। এই শিক্ষকদের বার্ষিক বেতন-ভাতা বাবদ খরচ হবে ১৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবল কাঠামো তৈরি না করায় অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ফলে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। এ পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনা চাই আর এমপিওভুক্তির আগ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা চাই।