৪৪তম বিসিএসে প্রশাসনে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা সাজিদুল ৪৫ তমে কাস্টমসে ৪র্থ
পরিবারকে বলা সেই প্রতিশ্রুতি— ‘আমাকে চারটা বছর সময় দিন। আমি চেষ্টা করব, পারব’—শতভাগ রাখলেন মো. সাজিদুল ইসলাম। পরিবারের দেওয়া সেই সময়টুকু নিঃশর্তভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি এবার ৪৫তম বিসিএসের কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ ক্যাডারে ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন।
সাজিদুলের যাত্রা শুরু কুড়িগ্রামের রৌমারীর গ্রামের স্কুল–কলেজ থেকে। নিজের কথায়, স্কুল–কলেজ জীবনে খুব বেশি পড়াশোনা না করলেও নিয়মিত ক্লাস করা ও স্যারদের শেখানো বিষয়গুলো ঠিকমতো পড়া—এগুলোই তাকে বেসিক জ্ঞান গঠনে সাহায্য করেছে। সেই বেস মজবুত ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তীতে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশোনার মান আরও বাড়ে। নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেন তিনি। ইন্টার্নশিপ চলাকালীন টুকটাক বিসিএস প্রস্তুতি নিলেও সিরিয়াস হয়ে পড়েন ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর।
তিনি বলেন, ‘প্রচুর টিউশনি করার কারণে মেডিকেল ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আমার প্রিপারেশন অটোমেটিক হয়ে গেছে।’
৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পেলেও এখনো নিয়োগ না হওয়ায় নতুন উদ্যমে অংশ নেন ৪৫তম বিসিএসে। এবার কাস্টমস ক্যাডারে তিনি চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।
নিজের প্রস্তুতির সহায়ক উপাদান হিসেবে টিউশনি, স্কুল–কলেজের বেসিক জ্ঞান, কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও মেসেঞ্জারের ডিসকাশন গ্রুপকে গুরুত্ব দেন সাজিদুল। চ্যালেঞ্জ ছিল সময় বের করা, নিয়মিত পড়াশোনা ও পরীক্ষা দেওয়া। তবে প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে প্রেরণার উৎস ছিল পরিবার।
তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারের কাছে ৪ বছর সময় চেয়েছিলাম। পরিবার কোনো প্রশ্ন ছাড়াই সময় দিয়েছে। এটাকেই মনে করে মোটিভেটেড হয়ে পড়াশোনা করতাম। সবসময় ভাবতাম—পড়তে যেহেতু হবেই, ভালো করেই পড়ব; নাহলে পড়ব না।’
আপনার সাফল্যের কৃতিত্ব কার হতো—প্রশ্নে অনায়াসে বললেন— ‘উইদাউট এনি থট, ইটস মাই ফ্যামিলি। ২৫ টা বছর আমাকে সাপোর্ট করেছে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও তিনি আশাবাদী। বললেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান—এমন কিছু করতে চান, যাতে মানুষ দীর্ঘদিন তাকে মনে রাখে।
গ্রামের স্কুলের ছেলেটি পরিবারের বিশ্বাস, নিজের শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায়কে মূল শক্তি করে আজ দাঁড়িয়েছেন কাস্টমস ক্যাডারের শীর্ষ সারিতে। চার বছরের সেই সময়, অপেক্ষা ও কঠোর পরিশ্রম মিলে গড়ে উঠেছে এক অনুপ্রেরণার গল্প—যা অনেকের পথ দেখাবে।