১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:২৯

শিক্ষা ক্যাডারে গণবদলি

লোগো  © ফাইল ফটো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দু’দিন আগে শিক্ষা ক্যাডারে গণবদলি করা হয়েছে। শেষ দু’দিনে অসংখ্য কর্মকর্তাকে পছন্দের জায়গায় পদায়ন করা হয়। অনেককে বদলি ও পদায়নের আগাম আদেশও দেয়া হয়েছে।

১১৭ জনের বদলির আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও বাকিদের তথ্য দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিগতভাবে এ তথ্য পেয়েছেন।

আবার ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজনকে এনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) ওএসডি করা হয়েছে। রীতি ভঙ্গ করে বেশকিছু আদেশ ওয়েবসাইটে না দেয়ায় এবং তফসিল ঘোষণার আগে এভাবে তড়িঘড়ি বদলি এবং ওএসডির আদেশ দেয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, অনেককে পদোন্নতি দিয়ে আগের পদে রাখা হয়েছিল। এখন তাদের উপযুক্ত পদ দেয়া হচ্ছে। এ বদলি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইটে কোনো আদেশ না থাকলে সেগুলোও দেয়া হবে।

জানা গেছে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এক এপিএস রয়েছেন। কয়েক মাস আগে সাবেক এ এপিএসকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে রাজশাহীর একটি কলেজে বদলি করা হয়েছিল। এর আগে সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশে তাকে এপিএস পদ থেকে সরানো হয়।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে পাঁচ বছরের ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন। তখন তার তিন বছরের ছুটি মঞ্জুরের প্রস্তাবও উঠেছিল। কিন্তু সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তার ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। এবারও নির্বাচনের আগে বিদেশে যাওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা মঞ্জুর না করে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর কারণে তার দুর্নাম আছে।

শনিবার বিকালে এ প্রসঙ্গে সাবেক এপিএস মন্মথরঞ্জন বাড়ৈ বলেন, তিনি লিয়েনের আবেদন করেননি। ঢাকায়ও তাকে ওএসডি করা হয়নি। এর বেশি তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে মন্মথরঞ্জনের লিয়েনে ছুটির আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি লিয়েনে যাওয়ার আবেদন করেছেন। আবেদন বিবেচনাধীন আছে। বদলি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা আছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আদেশে দেখা যায়, বুধ ও বৃহস্পতিবার ১১৭ জনকে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার ৪৭ জনের বদলির আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে অধ্যক্ষ ও চারজনকে উপাধ্যক্ষ করা হয়েছে। আছেন ছয়জন অধ্যাপক। এদিন ১৬ জন সহযোগী অধ্যাপক ও বেশ কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক পছন্দের জায়গায় বদলি হতে পেরেছেন।

গোলাম মোস্তফা ও মতিয়ুর রহমান নামে দু’জনকে আগাম পদায়ন করা হয়েছে। প্রায় দুই মাস পর যোগদানের শর্তে একজনকে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। একই কলেজে তিনি উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। রেজাউল হক নামে একজনকে কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে আগাম পদায়ন করা হয়েছে। ফাতেমা নাসরিন আখতার নামে এক অধ্যাপককে অনেক নিুপদে ব্যানবেইসের সহকারী পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে।

তিনি খুলনার সুন্দরবন কলেজে ছিলেন। মৌলভীবাজার থেকে এনে একজনকে একটি প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। মশিউর রহমান নামে এক অধ্যাপকের বদলির ক্ষেত্রে ঘটেছে তুঘলকি কাণ্ড। যেখানে শিক্ষকরা মাসের পর মাস ঘুরে বদলি হতে পারেন না সেখানে তাকে দু’মাস আগে বদলি করে রাখা হয়েছে।

৮ নভেম্বর বদলি করা হলেও তার বদলির আদেশ আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি কার্যকর হবে। আরও চার শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমন ঘটেছে। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপকের পদে আগাম বদলির আদেশ দিয়ে রাখা হয়েছে।

বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা অদ্ভুত রীতি অনুসরণ করে বলে জানা গেছে। অনেককে কৌশলে ওএসডি দেখিয়ে ঢাকার কলেজে সংযুক্ত করা হয়। এরপর তাদের ঢাকার লোক দেখিয়ে নিয়মিত পদায়ন করা হয়। এবারও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে চারজন সহকারী অধ্যাপক আছেন। সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার দু’জনকে নায়েমে পদায়ন করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পেছনে ‘রহস্যজনক কারণ’ আছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এর আগের দিন বুধবার ঘটেছে আরও বড় সংখ্যায় বদলির ঘটনা।

ওইদিন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৭০ জনের বদলির আদেশ প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে দু’জন অধ্যাপক, ৪৫ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১২ জন সহকারী অধ্যাপক, ১১ জন প্রভাষক। বদলির আদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে এর আগে নানা অভিযোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। নানা দুর্নামের কারণে বাবু নামের এক কর্মকর্তাকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে সরানো হয়েছিল।

এখন তাকে শিক্ষা প্রশাসনের কাজের কেন্দ্রবিন্দু মাউশিতে নিয়ে আসা হয়েছে। আরেক আলোচিত কর্মকর্তাকে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরে (ডিআইএ) বসানো হয়েছে। এসব আদেশের পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিবের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এসএমএস দেয়ার পর তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।