আপনার মোবাইল, পিসি কারও নজরদারিতে কিনা বুঝবেন কীভাবে?

  © প্রতিকী ছবি

২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাহরাইনের নয়জন আন্দোলনকর্মীর আইফোন হ্যাক হয়। নয়জনের মধ্যে দুজন লন্ডনে নির্বাসিত এবং তিনজন বাহরাইনের মানবাধিকার কেন্দ্রের সদস্য। ইসরায়েলের সাইবার নজরদারি ফার্ম এনএসওর পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে তাঁদের মুঠোফোন হ্যাক করা হয়েছিল। ফার্মটি পরিচালনার সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জড়িত।

প্রতিদিন এমন হাজার ঘটনা ঘটছে। হতে আপনিও কারো নজরদারিতে আছেন। আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, পিসি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে আপনাকে কেউ অনুসরণ করছে কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না।ফোনে স্পাইওয়্যার প্রবেশ করলে নজরদারি চলতে থাকবে আপনার অজান্তেই। বিভিন্ন সরকার ছাড়াও সাইবার দুষ্কৃতিকারীরা স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নিয়মিত নজরদারি চালাতে থাকে।

আপনি নজরদারির মধ্যে বুঝবেন যেভাবে

কোনো স্পাইওয়্যার আপনার ফোনে প্রবেশ করে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বুঝার সরাসরি কোনো উপায় না থাকলেও কিছুটা অনুমান করা যাবে। কিছু লক্ষণ দেখা দিলে মনে করবেন আপনি নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। যেমন ফোনে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে বারবার অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন দেখাবে। এসএমএস এর মাধ্যমে কোনো লিঙ্ক আসলে। 


এসব ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ফোনে আসা এই বিজ্ঞাপনগুলোতে কোনোরূপ ক্লিক করা যাবে না। এবং কোনো রকম অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না।

স্পাইওয়্যার ডিলিট করার উপায়

আগেই বলা হয়েছে বিভিন্ন রকমের স্পাইওয়্যার রয়েছে। এসবের মধ্যে জটিল স্পাইওয়ার ফোনে আক্রমণ করলে তা ডিলিট করা খুবই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে ফোন ফরম্যাট করার পরেও স্পাইওয়্যার ডিলিট করা সম্ভব হয় না। এজন্য স্মার্টফোনের গ্রাহকদের কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার দরকার হলে গুগল প্লে স্টোর থেকে নেওয়ার পরমর্শ দেওয়া হয়েছে। সব অ্যাপের তালিকা দেখতে বলা হয়েছে।  যদিও তা স্পাইওয়্যার কিনা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সন্দেহ হলে সেই অ্যাপ ডিলিট করতে পরমর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

স্মার্টফোন সুরক্ষিত রাখতে যা করবেন

স্পাইওয়্যার থেকে স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত থাকতে নিয়মিত ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ইমেল ও অন্যান্য অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলাতে হবে। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন পাসওয়ার্ড চালু করতে হবে। ফোনের লক স্ক্রিনে প্যাটার্ন অথবা পিন দিতে হবে। আর স্পাইওয়্যার প্রবেশের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে ফোন রিসেট করতে হবে।

টাস্ক ম্যানেজার অথবা অ্যাক্টিভিটি মনিটর চেক করুন

বিভিন্ন উৎস থেকে ম্যালওয়্যার এসে থাকে যেগুলোর আচরনও ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে র‍্যানসমওয়্যারের মতো কিছু কিছু ম্যালওয়্যারের আক্রমন ঠেকানো যায় না। অন্যগুলো হালকা হলেও প্রভাব বিস্তার করে।অন্যান্য ধরনের ম্যালওয়্যারের তুলনায় স্পইওয়্যার খুব সূক্ষ্ম। এটি আপনার কম্পিউটার ব্যবস্থার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আপনার টাইপ করা প্রতিটি পাসওয়ার্ড, সব ভিডিও কল এবং আপনার পাঠানো সব ইমেইলের ওপর নজর রাখে। এক্ষেত্রে সবার আগে আপনাকে উইন্ডোজ পিসির ক্ষেত্রে টাস্ক ম্যানেজার এবং ম্যাকের ক্ষেত্রে অ্যাক্টিভিটিতে নজর রাখতে হবে। আপনার পিসিতে কি ঘটছে তা এ দুটি আপনাকে জানাবে।

আরও পড়ুন: টিকটক বন্ধে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ

আবার আপনার ব্যাক্তিগত কম্পিউটার কি কেউ আপনার অজান্তেই ব্যবহার করছে। অথবা আপনার পিসির ওপর নজরদারি করে যাচ্ছে? এ রকম কিছু ঘটতে থাকলে তা কিভাবে বোঝবেন? কিছু কৌশলের সাহায্যে বিষয়টি বোঝা যায়।

পিসি ব্যবহারকারীরা এই পদক্ষেপগুলো অনুসরন করতে পারেন

ctrl+shift+Esc চেপে টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় আপনার পিসিতে চলমান অ্যাপস এবং ব্যাকগ্রাউন্ড প্রক্রিয়াগুলো দেখতে পারবেন। আপনার সামনে আসা তালিকা দিকে খেয়াল করলে যদি অপরিচিত কোন নাম দেখতে পান তাহলে সার্চ দিন এবং দেখুন কি ঘটছে। কখনো কখনো দেখা যায় এসব প্রোগ্রাম এবং ব্যাকগ্রাউন্ড প্রক্রিয়াগুলো বৈধ এবং উদ্বেগের কিছু নেই, প্রথম দেখায় নামগুলো জানা থাকে না এটিই যা সমস্যা। অ্যাপ অথবা প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে রাইট বাটনে ক্লিক করে End task চাপতে হবে।

ম্যাক ব্যবহারকারীরা এসব পদক্ষেপ অনুসরন করতে পারেন

অ্যাক্টিভিটি মনিটর ওপেন করতে হলে কমান্ড+স্পেসবার চেপে স্পটলাইট সার্চ ওপেন করতে হবে। এরপর অ্যাক্টিভিটি মনিটর টাইপ করার পর এন্টার চাপতে হবে। এরপর তালিকাটি খেয়াল করে দেখতে হবে সেখানে অচেনা কোন নাম রয়েছে কিনা।এই প্রোগ্রাম বা প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে ডাবল ক্লিক করে কুইট এ চাপতে হবে।

আপ টু ডেট থাকতে হবে

নিয়মিত আপডেট দেয়া যদিও বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। আপনি যখন ব্যস্ত থাকেন তখন সবসময় এগুলো সামনে চলে আসে এবং আপনি হয়তো উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করন অথবা ম্যাকওএসগুলোয় এসব বাগ ও অন্যান্য ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে চান না। কিন্তু এরপরেও কম্পিউটার আপ টু ডেট রাখলে কম্পিউটারকে ভাইরাসের মতো আবর্জনার বন্যা থেকে সামলে রাখা যায়। 


সর্বশেষ সংবাদ