ফেসবুকে বেশি সময় দিলে, বেশি খারাপ থাকবেন: গবেষণা
ভালো থাকতে চাইলে ফেসবুকে যত কম সময় দিবেন তত ভালো থাকতে পারবেন। কি বিশ্বাস হচ্ছেনা? না হওয়ারই কথা। প্রশ্ন জাগতে পারে ভালো থাকার সাথে ফেসবুক ব্যবহারে আবার কি সম্পর্ক! কিন্তু গবেষণা বলছে ফেসবুকে যত বেশি সময় দেবেন, তত খারাপ থাকবেন। তাই ভালো থাকার জন্য ফেসবুকে সময় দেয়া কমাতে হবে।
বছর পাঁচেক আগের এক জরিপ থেকে জানা গিয়েছিল, গড়পড়তা ফেসবুক ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে এই প্ল্যাটফর্মটিতে। আরেক জরিপে দেখা গেছে, বহু স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সকাল বেলার প্রথম কাজই হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপ দেখা। অনেকেই বিছানা থেকে নামার আগেই এ কাজ করে।
গবেষণা দেখিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার মুখোমুখি সম্পর্কের অবনতি ডেকে আনতে পারে, অর্থবহ কাজে বিনিয়োগ কমিয়ে দিতে পারে, পর্দার সামনে বেশি সময় কাটানোর ফলে অলস বসে থাকার সময় বাড়ে, বাড়ে ইন্টারনেট-আসক্তি, এবং নানা তুলনার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তলানিতে নামিয়ে আনতে পারে।
তুলনা জিনিসটা মানুষের আচার-আচরণের ওপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। মানুষ যেহেতু তাদের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখাতে বেশি আগ্রহী থাকে। তাই যে-কারও মনেই বিশ্বাস জন্মাতে পারে, অন্যদের তুলনায় তার জীবনে নেতিবাচকতা অনেক বেশি। তাই অনেকেই সন্দেহ করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অনেক নেতিবাচক হয়তো আমাদের ব্যক্তিজীবনে পড়বে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে পরিচিত যে অ্যাপ
সম্প্রতি দুই গবেষক হলি বি. শাকিয়া ও নিকোলাস এ. ক্রিস্টাকিস ৫ হাজার ২০৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ফেসবুক ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ভালো থাকার ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা দেখা।
এ গবেষণায় অন্যের পোস্টে মানুষের লাইক দেয়া, নিজের পোস্ট তৈরি করা এবং লিঙ্কে ক্লিক করার প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের বাস্তবজীবনের সামাজিক নেটওয়ার্কও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন দুই গবেষক।
দুই বছর ধরে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে পরিবর্তন আনার ফলে ভালো থাকা কীভাবে বদলে যায়, তা-ও বুঝতে সুবিধা হয় গবেষকদের।
ব্যবহারকারীদের ওপর তাদের লাইক, পোস্ট ও লিঙ্ক ক্লিকের প্রভাব বিশ্লেষণ করে বেশ মজার কিছু ব্যাপার দেখেছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন, অন্যের পোস্টে বেশি লাইক দেওয়া মানুষ ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের তুলনা করেন। আরেকজনের সুন্দর, হাস্যোজ্জ্বল প্রোফাইল পিকচার দেখে তার তুলনায় নিজের জীবনকে বড় বেশি বিবর্ণ, একঘেয়ে মনে হয় অনেকের কাছে। এই তুলনার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যবহারকারীর ভালো থাকার ওপর। তাছাড়া নিজের স্ট্যাটাস আপডেট ও বিভিন্ন লিঙ্কে ক্লিক করারও একই ধরনের প্রভাব পড়ে ব্যবহারকারীদের ওপর।
সব মিলিয়ে গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের ভালো থাকার ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করে আমরা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতক্ষণ সময় কাটালাম, তার ওপর। গবেষকরা আরও বলছেন, অনলাইনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কিছুতেই বাস্তবজীবনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে না।