০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:২৮

ফেসবুক-ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে নয়া উদ্যোগ, স্বাধীনতা আরো খর্ব হবে না তো?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিতর্ক  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনমূলক প্লাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশটির টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং নেটফ্লিক্সের মত ওভার দ্যা টপ বা ওটিটি প্লাটফর্মের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে তারা নীতিমালা প্রণয়নের এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এতে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরও খর্ব হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকার পরও আলাদা নীতিমালার প্রয়োজন নেই বলে মত অনেকের।

সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, "এখন বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোন বিষয়ে রাস্তায় প্রতিবাদে বাধা আসে। অন্য কোন মাধ্যমেও প্রতিবাদ করা যায় না। সেখানে ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম মত প্রকাশের একটা প্লাটফর্ম হিসাবে দাঁড়িয়েছে। সেটাকেও এখন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।" 

তিনি উল্লেখ করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে এবং তাতেও ডিজিটাল প্লাটফর্মে কী করা যাবে বা করা যাবে না-এসব বলা আছে। এরপরও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও খর্ব করার জন্য সুনিদিষ্ট নীতিমালা করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

কোন ব্যক্তিকে হেয় করা বা অন্যদেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না বলা হয়েছে। এগুলো কীভাবে নির্নয় করা হবে-এই প্রশ্নও তুলেছেন আইনজীবীদের অনেকে।

এদিকে, বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও সামাজিক মাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মের বিস্তার ঘটছে ব্যাপকভাবে, সেজন্য আইন থাকলেও নীতিমালা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

আইনটির প্রস্তাবিত নাম হচ্ছে, 'দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরী কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্লাটফর্মস'।
সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর জন্য যেমন অনেক নিয়মের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে, একইসাথে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্যও রাখা হয়েছে অনেক নিয়ম। যেমন:
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে কোন মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটুক্তি করা যাবে না।
কোন ধর্মের অনুসারীদের আহত করে বা আঘাত দেয়-এমন কোন মন্তব্য বা বিষয় প্রচার করা যাবে না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, এমন কিছু করা যাবে না।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এসব পোস্ট বা প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসাথে এই বিষয়গুলোতে ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষসহ সব সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনের প্লাটফর্মগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে।
এছাড়া নেটফ্লিক্স, হইচই এবং অ্যামাজন প্রাইম-সহ বিনোদনের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোতে অশ্লীল এবং অনৈতিক কোন কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না, বলা হচ্ছে নতুন নীতিমালার খসড়ায়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শিকদার বলেছেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং অ্যামাজন প্রাইম এবং নেটফ্লিক্স সহ ওটিটি প্লাটফর্মের যারা বাংলাদেশে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করতে হবে।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন কোন অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে তারপর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় আসবে। কিন্তু সেখানেও অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তি কী হবে-সেই প্রশ্নও থেকে যায়।