‘প্রাথমিক চিকিৎসার মতই সকলের অর্থনীতির প্রাথমিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন’
বিশ্বায়নের এ পৃথিবীতে ‘চুরি-ডাকাতি করে অর্থ আত্মসাৎ’ কমে গেলেও বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতা। যার ফলে প্রতারিত হয়ে আসছেন লাখো-কোটি মানুষ। জেনে অবাক হবেন যে, অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও প্রতারিত হয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত।
অর্থনীতিবিদ মোহাইমিন পাটোয়ারী মনে করেন, অর্থনীতি সম্পর্কে না জানলে আমাদেরকে এভাবে প্রতারিত হতেই হবে। এ প্রসঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে তরুণ এ অর্থনীতিবিদের নয়া কলাম:
অনেক সময় আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করি অথবা কোন ধোঁকামূলক প্রজেক্টে টাকা খাটাই এবং তার কিছুদিন পরেই সর্বস্ব হারিয়ে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরি। এমনটি হবার পেছনে ভাগ্যকে দায়ী করে আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দেই। অথচ, এর জন্য দায়ী আমাদের অজ্ঞতা- অসচেতনতা।
অর্থনীতি আমাদের সকলের জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নিতান্তই অল্প। আমরা জানি না কিভাবে পঞ্জি স্কিম বা মাল্টি লেভেল মারকেটিং সনাক্ত করতে হয়, কিভাবে বিনিয়োগের প্রাক্কলণ করতে হয়, সুদ এবং ব্যবসার তফাত কোথায় ইত্যাদি। এভাবে এই সকল অজ্ঞতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছোট বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়, ধোঁকা দেয় এবং আমরা নিজেরাও হিসেব-নিকেশ না করে ভুল খাতে বিনিয়োগ করে ফেলি। সম্প্রতি এহসান গ্রুপ, ই-ভ্যালি, রিং আই ডি সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদেরকে ধোঁকা দেওয়ার মত ঘটনা এই বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে এই ধরণের পরিস্থিতির যারা শিকার হয়েছেন তাদের অনেকে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরোধী হয়ে যান এবং সবকিছুকে ধোঁকা ভাবতে শুরু করেন। এর ফলে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা থেমে যায়, ব্যপারটি এমন নয় বরং সমাজের একাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুফল থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন। অপরপক্ষে, আরেকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল সুফল নিয়ে সর্বদা লাভবান হয়ে থাকেন।
এই সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে জ্ঞান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। জ্ঞানকে অস্বীকার করে আমাদের সামনে আগানোর কোন সুযোগ নেই। তাই সব কিছু বর্জন না করে কিভাবে ন্যায়ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়তে পারি সেই লক্ষ্যেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
তাই আজ যারা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছো তাদের উচিত হবে নিয়মিত অর্থনৈতিক খোঁজ খবর রাখা এবং সুক্ষ্মদৃষ্টি বজায় রাখা। সব কিছু সরল ভাবে নিলে যেমন বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে, ঠিক তেমনি সব কিছুকে ভুল ভাবলে উপকার থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনাও আছে। অর্থনীতি যে খুব জটিল বিষয় ব্যাপারটি তা নয়। যেই কেউ চাইলে এই বিষয়ে সমূহ জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
একজন ক্রিড়াবীদ না হয়েও যেমন করে আমরা খেলা সম্পর্কে অনেক কিছু জানি, ঠিক তেমনি কেবল উৎসাহ থাকলেই অর্থনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু যেই কারো জানা সম্ভব। আমি একটি কথা প্রায়ই বলি, ‘অর্থনীতি হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা অর্জন করলেই অর্থনীতির খুটিনাটি পরিষ্কার হয়ে যায়। জটিল জটিল সমীকরণ সমাধান করতে লাগে না।’
এই কথা সত্য যে, আমরা সকলে অর্থনীতিবীদ হয়ে যেতে পারব না। জীবনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জ্ঞান সকলের থাকা উচিত। একটি উদাহরণ দিলে আপনারা ভালো বুঝবেন। চিন্তা করে দেখুন, আমরা সকলে কিন্তু ডাক্তার হতে পারি না, তবে শরীর ভালো রাখার জন্য বা বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান সকলেরই থাকা উচিত। ঠিক তেমনি সকলের দ্বারা অর্থনীতিবিদ হওয়া সম্ভব না হলেও সাধারণ জ্ঞান সকলের অর্জন করা উচিত।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক