ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রামের চেহারা বদলে দিয়েছে শিক্ষক দেলোয়ার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০২:৩৫ PM , আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০২:৫৪ PM
নিজেদের গ্রামকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী রান্না করে বিনামূল্যে গ্রামবাসীর মধ্যে বিতরণ করছে ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম খোকসা উপজেলার শিমুলিয়ার মোল্লাপাড়ায় এমন নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন।
‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে নিজের গ্রামকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে এ চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার প্রায় ৩৭ লাখ। এখন এ চ্যানেলটির মাধ্যমে উন্নত হচ্ছে গ্রামটি। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সৃষ্টি হয়েছে গ্রামে নারী, বেকার যুবক এমনকি বৃদ্ধদের কর্মসংস্থান। শিমুলিয়ার মোল্লাপাড়ার চেয়ে এখন ওই গ্রাম ‘ইউটিউব গ্রাম’ নামেই বেশি পরিচিত।
২০১৬ সালের জুন মাসে লিটন আলী খান ও স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন যৌথভাবে ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ নামে ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। যে চ্যানেলটি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যে এখন এর সাবস্ক্রাইবার প্রায় ৩৭ লাখ।
শুরুর দিকে গ্রামীণ সব রান্নাবান্না, শিশুদের নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে পিকনিক আয়োজন, খালে বিলে মাছ ধরার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে তুলে ধরা হয় ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওইসব ভিডিও চিত্রধারণ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো মেমরি কার্ডের মাধ্যমে। সেখানে ভাগ্নে লিটনের সাহায্যে তা আপলোড করা হতো ইউটিউব চ্যানেলে। সাফল্য পেয়েছে চ্যানেলটি। এখন আর মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় না ভিডিওচিত্র। এর জন্য ক্যামেরা, ক্যামেরাম্যান রয়েছে। সেই সঙ্গে এখন ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ চ্যানেলে ওই গ্রামের নারীদের রান্না করার ভিডিও দেখানো হয়।
‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ ছাড়াও তাদের আরো বেশ কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তাদের। এছাড়া বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘ক্রিয়েটিভ বয়েজ‘ নামের আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল। যেখানে কাজ করেন ওই গ্রামের বেকার যুবকরা। তারা গ্রামীণ বাঁশ, কাঠ দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন জিনিষপত্র। সেটা ভিডিও করে তাদের চ্যানেলে এ আপলোড করা হয়।
বৃদ্ধ তিন ব্যক্তির রান্না দেখানো হয় ‘ভিলেজ গ্রান্ডপাস কুকিং’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে। ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক তিনজন রান্না করেন আর সেসব রান্না করা খাবার গ্রামের প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ও অসহায় বৃদ্ধদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে রান্না থেকে শুরু করে খাবার পরিবেশনের পুরো ভিডিও ধারণ করে এ চ্যানেলটিতে আপলোড করা হয়।
এছাড়া ‘দ্যা ফিশিং লেডি’ নামের আরো একটি চ্যানেলের মাধ্যমে তারা দেখান গ্রামের একজন নারী কীভাবে মাছ ধরেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, বছর চারেক আগে রাজধানী ঢাকায় বসে ভাগ্নে লিটনের সঙ্গে কথা হয়। লিটন সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ জেলা কুষ্টিয়ায় নিজের গ্রামের গ্রামীণ সব কৃষ্টি-কালচার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তুলে যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে আমরা চিন্তা করি, গ্রামের মানুষদের নিয়ে খাবার রান্না করে ভিডিও করব। সেসব খাবার গ্রামবাসীকে খাওয়ানো হবে। পরে আমরা আস্তে আস্তে সে কার্যক্রম শুরু করি। ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে আমরা সেখানে রান্নার ভিডিও করে আপলোড শুরু করি। তারপর আর আমাদের ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আমাদের পাঁচটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।
তিনি বলেন, এক একটি চ্যানেলে এ এক এক ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সবগুলোই আমাদের গ্রাম নির্ভর। এখানে ৪৫ জন মানুষ রয়েছেন বেতনভুক্ত। যারা এসব কাজ করেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন নারী রান্না করেন, যাদের বেতন মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। প্রতিমাসে সাত-আট লাখ টাকার মতো খরচ হয় আমাদের। মাসে অন্তত ২০ দিন আমরা বিভিন্ন ধরনের রান্না করি। একেক দিন গ্রামের অন্তত ৪০০ জনের জন্য রান্না করা হয়। যা পরে গ্রামের মানুষ এসে বিনামূল্যে খেয়ে থাকেন। আমাদের খরচেই এসব রান্না হয়। একদিনের রান্নায় পদ ভেদে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া এ চ্যানেল থেকে যে আয় হয়, তার থেকে আমরা গ্রামের মানুষদের, গ্রাম উন্নয়নে, অসুস্থ ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করি।
তিনি বলেন, শুরুর দিকে আমাদের এ কাজ অনেকেই বাঁকা চোখে দেখতেন, নানা কথা বলতেন। তবে এখন গ্রামবাসী আমাদের উৎসাহ দেন। আমরা সবাই মিলেমিশে আনন্দ করে কাজ করি।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত হয়েছে এ গ্রাম। প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন ভালো খাবার খেতে পারেন।
ইউটিউব চ্যানেল ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’র দৌলতে এ গ্রামের মানুষ প্রতিদিন একবেলা পেট পুরে খেতে পারেন। খুশি ওইসব মানুষ, যারা হরেক রকমের সুস্বাদু আইটেমের খাবার খেয়ে হাসিমুখে চলে যান নিজ নিজ গন্তব্যে।