করোনা মারা গেলেন ১৪৩ ব্যাংকার
করোনাভাইরাসে টালামাটাল পুরো বিশ্ব। এর প্রভাব ঠেকাতে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। লকডাউনে জরুরি সেবা হিসেবে সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে ব্যাংকের কার্যক্রম। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নানা প্রতিবন্ধকতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও কাজ করছেন ব্যাংকাররা। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ১৪৩ ব্যাংকার মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ২০৩ জন। গত জুন মাসেই করোনা মারা গেছেন ১০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৭৩ জন ব্যংকার।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মাসে করোনা উপসর্গ দেখা যায় সহস্রাধিক কর্মীর শরীরে। তারা বলেন, সাধারণ ছুটি, লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ, সবসময়ই জরুরি সেবা হিসেবে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় অফিসে যাতায়াত এবং ব্যাংকিং সেবা দিতে গিয়ে অনেক সময় সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যাংকাররা। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অধিক কর্মীসমাগম ঠেকাতে অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর জোর দেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৭ হাজার ২৩৭ কর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ১৪৩ জন মারা যান। গত মে মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৪০০ জন। ওই সময় পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩৩ জন। করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যাংককর্মী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ কর্মী মারা গেছেন। এর মধ্যে গত বছর মারা যান ২২ জন। চলতি বছর না ফেরার দেশে পাড়ি দেন পাঁচজন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ১১ জন এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাত কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ব্যাংককর্মীদের মধ্যে প্রথম মারা যান সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট মুজতবা শাহরিয়ার (৪০)। গত বছরের ২৬ এপ্রিল সকালে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওই ঘটনার পর প্রাণঘাতী করোনার ভীতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংককর্মীদের কাজে ফেরাতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। ঝুঁকিবিমাসহ যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এককালীন আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংকসেবা চালু রাখতেই হবে। এজন্য কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সরকারের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনা করে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।