ইভ্যালির প্রকৃত দায়-দেনা হতে পারে আরও বেশি: বাংলাদেশ ব্যাংক
সময়ের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির দায়-দেনার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিপুল দায়ের কারণে দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিটির অস্তিত্ব রক্ষা হতে পারে অসম্ভব। কোম্পানীটির আর্থিক অনিয়মের ব্যাপকতা নিরূপণে একটি নিরপেক্ষ চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতেও সুপারিশ করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।
পরিদর্শন দলকে ইভ্যালি যেসব তথ্য সরবরাহ করেছে, তার সঙ্গে ডাটাবেজের তথ্যে গড়মিল থাকার আশঙ্কা থেকে বিশেষ অডিট পরিচালনারও সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ইভ্যালিসহ কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অতিরিক্ত দায় সৃষ্টি করে অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলকে দেওয়া ইভ্যালির তথ্য অনুযায়ী, ইভ্যালির দেনার পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা। অথচ কোম্পানিটির চলতি সম্পদের মূল্য ৬৫.১৭ কোটি টাকা। আরও অন্তত ৭৩ কোটি টাকা গ্রাহকদের পাওনা রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট টাকা রয়েছে দুই কোটি।
বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণে বলেছে, একটি কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের তথ্য সঠিক পদ্ধতিতে এন্ট্রি ও নির্দিষ্ট মেয়াদকালে সংরক্ষণ করা আবশ্যক। ইভ্যালির কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছিল, খুবই কম তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। ডাটাবেজে ঢুকতে না দেওয়ায় তথ্যের সঠিকতাও যাচাই করা যায়নি।
এতে বলা হয়েছে,‘চলতি অর্থবছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির লোকসান মোট সম্পদের ২.৩৩ গুণ। শেয়ার মূলধনের ক্ষেত্রে এটি ২১৩.৪৮ গুণ। এই বিপুল পরিমাণ লোকসান গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না থাকায় কোম্পানির অস্তিত্ব রক্ষাই অসম্ভব করে তুলতে পারে। ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে গ্রাহকদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য যথাযথ তদারকির মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ক্রেতা আকৃষ্ট করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে লোকসানে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে যেন নিজেদের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে জেলার মধ্যে সাত দিন এবং অন্য জেলায় ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়াসহ ব্যর্থতায় মূল্য ফেরতের বিধান রেখে গত বছর গাইডলাইনের খসড়া তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলার সুযোগ রেখে তৈরি গাইডলাইনটি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গাইডলাইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই এটি জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।