চলতি দায় ও লোকসানের চক্রে বাঁধা ইভ্যালী: বাংলাদেশ ব্যাংক

ইভ্যালির পণ্য সরবরাহ
ইভ্যালির পণ্য সরবরাহ   © সংগৃহীত

‘ইভ্যালীর চলতি দায় ও লোকসান দুটিই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্টু চক্রে বাঁধা পড়েছে ‘ এমন প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 'ক্রমাগতভাবে সৃষ্ট দায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝূঁকি তৈরি হচ্ছে' বলেও জানিয়েছে ব্যাংকটি।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইভ্যালী ডট কম এর উপর পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ জন কর্মকর্তার একটি দল পাঁচ দিনব্যাপী এই পরিদর্শন শেষে গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুরু থেকেই কোম্পানিটি লোকসান করে আসছে এবং এই লোকসানের পরিমান দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতেই চলছে। তবে পূর্বের এই দায় পরিশোধ ও লোকসান আড়াল করার জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারও দিচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানিটি। বিভিন্ন সময়ে দেওয়া অফারের উপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে তাদের নিকট অর্থও সংগ্রহ করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।   

ইভ্যালীর বর্তমান সম্পদ ৬৫.১৭ কোটি টাকা কিন্তু গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে  দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩.৮০ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৩.৯৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করেনি ইভ্যালী। অন্যদিকে, ইভ্যালী যেসব কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কিনে ওই সব মার্চেন্টদের কাছে কোম্পানিটির বকেয়া ১৮৯.৮৫ কোটি টাকা।

কোম্পানিটির চলতি সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের মধ্যে যে বকেয়া আছে তার মাত্র ১৬.১৪ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব হবে এবং বাকি ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার সমপরিমাণ দায় অপরিশোধিত থেকে যাবে। এই দায় কোন অবস্থাতেই ইভ্যালীর পরিশোধ করার সক্ষমতা নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

লোকসানে পণ্য বিক্রি করার কারণে ইভ্যালী গ্রাহক হতে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পরও মার্চেন্টদের কাছে বকেয়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কোম্পানিটির এই কর্মকান্ড সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের দেওয়া ইভ্যালীর স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল পজিশন অনুযায়ী, গত ১৪ মার্চ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির মোট দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা মোট সম্পদের ঘাটতি ৩১৫.৪৯ কোটি টাকা, চলতি দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা চলতি সম্পদের ঘাটতি ৩৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইভ্যালীর মোট সম্পদ প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের মাত্র ২২.৫২ শতাংশ এবং চলতি সম্পদের পরিমাণ চলতি দায়ের মাত্র ১৬.০১ শতাংশ। কোম্পানিটির ১ কোটি টাকার শেয়ার মূলধনের বিপরীতে ২৬.৫১ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে কিন্তু কোন দীর্ঘমেয়াদি দায় নেই।

কোম্পানিটির মোট সম্পদ ও মোট দায়ের মধ্যে এ ধরণের অসামঞ্জস্যতা, চলতি দায় অপেক্ষা চলতি সম্পদের বিপুল ঘাটতি, চলতি দায় হতে স্থায়ী সম্পদ তৈরির প্রক্রিয়া কোম্পানিটির সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নির্দেশ করে বলেও উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

 


সর্বশেষ সংবাদ