স্বপ্নেও ভাবিনি আমাকে এই ভিডিও বানাতে হবে— আয়মানের আকুতি
টেন মিনিট স্কুলের ভিডিও নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সমালোচনার ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আয়মান সাদিক। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে না। ফেসবুকে তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে রবিবার রাতে তার ইউটিউব চ্যানেল এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘দয়া করে বাঁচতে দিন’ শিরোনামে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
বিষয়টি পরিষ্কার করে ভিডিও বার্তায় আয়মান সাদিক বলেন, ‘‘আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি আমাকে এ ভিডিওটা বানাতে হবে এবং আমাকে আমার ধর্মের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু আমার মা যখন ইউটিউবে দেখে আমাকে এসে দেখায় ‘আমাকে খুন করে ফেলার জন্য বলা হচ্ছে’। তখন আপনার কেমন লাগবে আমি জানিনা।
আমার বাসায় এখন এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, আমি কিছুক্ষণ পর পর আমার বাবা-মাকে দেখছি এবং তারাও আমাকে নজরে রাখছে আমি আদৌ ঠিক আছি কিনা।
ফেসবুক-ইউটিউব সব জায়গায় আমাকে এবং টেন মিনিট স্কুলের সদস্যদের মেরে ফেলার জন্য বলা হচ্ছে। তারা বলছে, এই মুরতাদকে আপনার যে যেখানে পাবেন জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবেন। আর এসব পোস্ট শত শত না হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করছে।
এসবের কারণ হিসাবে তারা বলছে, আমি আমার ধর্মের হিসাব দেয়নি। টেন মিনিট স্কুলের ভিনদেশে থাকা সাবেক এককর্মী সমকামিতা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছে। এটার জন্য আমাকে মেরে ফেলতে হবে। তারপরেও ভিনদেশে থাকা টেন মিনিট স্কুলের সাবেককর্মীর স্ট্যাটাসের দায়ভারও আমি নিয়েছি। এটার মাধ্যমেও কেউ যদি ধর্মীয়ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি।
মানুষ আমার ধর্মের হিসাব চাচ্ছে। আপনাদের সামনে এটা তুলে ধরছি। টেন মিনিট স্কুল ধর্মীয় কোন প্রতিষ্ঠান না, তার কোন ধর্ম নেই। আমার ধর্ম আছে আমি মুসলিম। আল্লাহর যে বিধিবিধান আছে যতটুকু সম্ভব সেগুলো মেনে চলতে আমি চেষ্টা করি। সবকিছু পারিনা, তবে চেষ্টা করছি।
কিন্তু বিগত কয়েকদিন আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমার বিভিন্ন নামাজ পড়ার ছবি, বিভিন্ন সময় ইসলামের কথা বলেছি এসব দিয়ে আমার মুসলিমের পরিচয় দিচ্ছে। বিষয়টা একবার চিন্তা করেছেন এটা কতটা কষ্টদায়ক।
আমাকে বলা হচ্ছে নব্য মিশনারী, আমি কাফেরদের এজন্ট, আমি পশ্চিমা অপসংষ্কৃতি প্রচার করার এজেন্ট। আমিও আবারও স্পষ্ট করে আপনাদের সবার সামনে বলছি, টেন মিনিটি স্কুলের কোন প্রোপাগান্ডা বা এজেন্ডা নেই। আমি ইসলামবিরোধী কোন কিছু প্রচার করছি না। এটা নিয়ে আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই। আমি হাতজোড় করে বলছি, আমাদের সবকিছু পাবলিক আপনারা দেখতে পারেন। দেখে বিচার-বিবেচনা করতে পারেন। তারপরও যদি মনে হয় বিষয়টা অসত্য তাহলে বলেন আমাদের আমরা এটা নিয়ে কাজ করি।
আমি জানিনা আমাদেরকে আর কীভাবে প্রমাণ করা দরকার যে আমরা কোন প্রোপাগান্ডা করছি না। আমাদের কোন সিক্রেট এজেন্ডা নেই। এটা বলার আমার আর ভাষা নেই।
এরপরও আমরা ধরে নিচ্ছি, আমাদের ভাষাগত ত্রুটি ছিল। যেভাবে বিষয়গুলো আমরা বুঝাতে চেয়েছি সেগুলো সেভাবে বুঝাতে পারিনি। এরজন্যেও আমি সবার সামনে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছি, দেখেন আমরা এটা করতে চাইনি অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। আমরা এরজন্য দুঃখিত। আমাদের যেসব ভিডিও নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সবগুলো ভিডিও আমাদের সব প্ল্যাটফর্ম থেকে ডিলিট করে দিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি টেন মিনিট স্কুলের দুই ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে সমকামিতা সমর্থন, ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ ও ঋতুস্রাব এবং শারিরিক সম্পর্কে সম্মতির বিষয়ে করা দুটি ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে আয়মান বারবার তার অবস্থান পরিষ্কার করলেও বিকর্ত যেন থামছেই না।
এর আগেও গত বৃহস্পতিবার রাতে টেন মিনিট স্কুলের ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, আসসালামু আলাইকুম। আমি আয়মান সাদিক বলছি টেন মিনিট স্কুল থেকে। গত মাসে আমাদের দুইজন ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে সমকামিতা সমর্থন ও ইসলাম বিদ্বেষের কথা ওঠে। নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এখানে আমার বক্তব্য তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, আমাদের কোন ইন্সট্রাক্টর এর নিজের ফেইসবুকে দেয়া পোষ্ট এবং কমেন্টের উপর টেন মিনিট স্কুলের কোনো প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা আমাদের সকল কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের বর্তমান কিংবা সাবেক কোনো কর্মীর ব্যক্তিগত মতাদর্শ টেন মিনিট স্কুল ধারণ কিংবা প্রচার করে না। আমরা কখনোই কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে চাইনি। এসব নিয়ে আমাদের কোনো এজেন্ডা বা পরিকল্পনাও নেই।